সাজিয়া আক্তার : ভাগ্য বদলাতে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি নারী শিকার হয়েছেন ভাগ্য বিড়ম্বনার। অমানবিক নির্যাতনের পর তাদের কেউ কেউ দেশে আসেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে। ফিরতে পারেন না বাড়িতে। বিভিন্ন সংস্থার আশ্রয়ে জন্ম হয় পিতৃপরিচয়হীন সন্তানের। প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয় কী করছে এসব বিষয়? যমুনা টিভি
রেশমা ভাগ্য বদলাতে গৃহকর্মী হিসেবে গত বছর পারি জমান সৌদি আরবে। তার জীবনে সচ্ছলতা আসেনি, উল্টো পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রথম দিন থেকে। ধর্ষণের শিকারও হতে হয়েছে তাকে।
সৌদি আরব থেকে আসা নারী রেশমা খাতুন বলেছেন, বিদেশে যাওয়ার পর আমাকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হতো। এখন আমার একটি মেয়ে হয়েছে, এই মেয়ের কি পরিচয় দেবো সমাজের কাছে সেটা ভেবে পাচ্ছি না।
নিয়তি বারবারেই প্রতারণা করছে রেশমার সাথে। এক যুগ আগে নয় মাস বয়সি কন্যাসহ তাকে ছেড়ে যায় স্বামী। এরপর কখনো বাসা-বাড়ি, কখনো বা পোশাক শিল্পে কাজ করে টেনেছেন জীবনের ঘানি। সৌদি আরবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে রেশমা যোগাযোগ করেন দূতাবাসে, কিন্তু মেলেনি তেমন কোনো সহযোগিতা। পুলিশে ধরা দিয়ে জেল খেটেছেন। চক্ষু লজ্জায় গ্রামে ফিরতে না পেরে ঠিকানা হয়েছে আহছাানিয়ামিশনে। সেখানেই জন্ম আরেক কন্যা সন্তানের।
রেশমার মতো আরেক নারীও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে শিকার হয়েছেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। তার নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলেন এক বাঙালি ভাইকে, কিন্তু তার দ্বারা আবারো ধর্ষণের শিকার হয়ে কিশোরি এখন অন্তঃসত্ত্বা। সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে আইনি পদক্ষেপও নিতে পারছেনা অনেকেই।
বেসরকারি বিভিন্ন সংস্কার হিসেবে প্রায় দেড় হাজার নারী দেশে ফিরেছেন নির্যাতনের শিকার হয়ে, আর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে ফিরেছেন আরো ১৭ জন। অভিযোগ রয়েছে শুধু দেশে পাঠিয়ে এর দায় সারে বাংলাদেশ দূতাবাস।
আহছানিয়ামিশনের সহকারী পরিচালক এম. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ধর্ষণের পক্ষে বিচার আছে, কিন্তু ওদের পক্ষে দ্বারানোর মতো কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নেই।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের হেড অব প্রোগ্রাম শরিফুল হাসান বলেছেন, যদি নিপীড়নকারিকে চিহ্নত করা যায় এবং এর পাশাপাশি যে সন্তান জন্ম হলো সেই সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতো। সেই লড়াইটাও করা দরকার আমাদের।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান বলেছেন, আমরা এবিষয়ে অবগত নই, তবে এখন যেহেতু বিষয়টা জানতে পারলাম, কাজেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।
নিজের এবং পরিবাবের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নারীরা পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে হয়েছেন পরিবার, সামাজ, রাষ্ট্রের বোঝা। কিন্তু এর দায় কার? তাদের অনাগত এই শিশুর দায়ভারেই বা কে নেবে?
আপনার মতামত লিখুন :