গৌতম চক্রবর্তী : ভারতীয় সেনা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ও একটি চূড়ান্ত পেশাদার বাহিনী। তারা আমার-আপনার ফেসবুকের ডায়ালগ, লাফালাফি, হুঙ্কার ইত্যাদির তোয়াক্কাও করেন না। তারা নিজেদের হিসাব নিজেরা মিটিয়ে নেন। অতীতেও নিয়েছেন বহুবার, আবার নেবে। নিশ্চিতভাবেই নেবে। এমন কিছু ঘটনা আমরা জেনেছি, কিছু জানতেও পারিনি। মাঝখান থেকে আপনাদের এই যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও ফেবুতে তার প্রকাশ সুন্দরভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। লাগাচ্ছে রাজনীতিবিদরা। জেনে না জেনে আপনিও তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন।
ভারতবর্ষ এক অদ্ভুত সুন্দর কনসেপ্ট। নানা জাতি ধর্ম বর্ণের মানুষ নিজের সত্তা নিয়ে সগর্বে বাস করেন এখানে। নিজেদের মধ্যে যে টুকটাক লাগে না তা নয়, তবে দেশের সমস্যায় সবাই একাট্টা। তামিল তেলেগু গুজরাটি বাঙালি পাঞ্জাবি ওড়িয়া ইত্যাদি আলাদা আলাদা জাতিসত্তা, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন ইত্যাদি আলাদা আলাদা ধর্মীয় পরিচয়। কিন্তু সময়মতো একটাই পরিচয় সবার আগে দাঁড়িয়ে যায়, ভারতীয়। বহু বাধা, বিপত্তি, ঝড়-ঝাপটা সামলে আজও অটল এই পরিচয়। আমি কাঁটাতারবিহীন দুনিয়ার স্বপ্ন দেখি, আমার দেশকে মনে হয় তারই এক ক্ষুদ্র সংস্করণ।
কাশ্মীরের জঙ্গিহানা দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য প্রতিটি ধর্ম জাতিকে রক্তাক্ত করেছে। দেশের কোণায় কোণায় আমাদের ছেলেরা ঘরে ফিরেছে কফিনবন্দি হয়ে। গোটা দেশের মানুষ ফুঁসছে, রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে। আর এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে আমকাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে। দেশের নানা প্রান্তে আক্রান্ত হচ্ছেন কাশ্মীরিরা। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও দৈহিকভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে। কারা এর পেছনে আছে এবং কেন এটা করছে সেটা কিন্তু আমরা সকলেই জানি। এই আক্রমণ আদপে আমাদের বহুজাতিক রাষ্ট্রীয় কনসেপ্টের ওপর আক্রমণ। এই আক্রমণ আদপে পাকিস্তানের দ্বিজাতি তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা করছে, যা বহুদিন আগেই ভুয়া প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম।
ভাবুন। পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্র নয়, পাকিস্তান একটা কনসেপ্ট। একটা ঘৃণ্য কনসেপ্ট। যেটা ধর্ম দিয়ে মানুষের আত্মপরিচয় নির্ধারণ করে। সেই কনসেপ্টের কারণে পাকিস্তান একবার টুকরো হয়েছে, এমনকি এখনও ধুঁকছে দারিদ্র্য আর অশিক্ষায়। কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও আমাদের দেশটা ভাঙা যায়নি। আজকের এই জাতিগত ঘৃণা আমাদের পাকিস্তান বানানোর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে না তো? আমরা আসলে হেরে যাচ্ছি না তো পাকিস্তানের কাছে?
ভারতীয় সেনার কাজ ভারতীয় সেনা করবে। আমরা তাদের কাছে যতোটা আশা রাখি তার থেকে বেশিই করবে। আমাদের কাজটুকু আমরা ঠিকঠাক করলেই যথেষ্ট। এখন পাশে থাকার সময়, হাতে হাত রাখার সময়। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :