গোলাম মোর্তোজা : আল মাহমুদকে নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়ে গেছেন, নিজেদের মুক্তমনা-প্রগতিশীল দাবিদার লেখক-কবি-সাংবাদিক-শিক্ষক তথা সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা। ‘১৯৭১ সালে কী করেছিলেন’-আল মাহমুদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না। প্রশ্ন যে একেবারে ওঠানো হয়নি তা নয়।’ কলকাতায় ছিলেন, যুদ্ধ তো করেননি’- প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
এই আলোচনাও বেশিদূর এগোনো যাবে না। আহমদ ছফার লেখার রেফারেন্স চলে এলে, কতোজনকে যে মুখ লুকাতে হবে! আল মাহমুদের কবিতা, ছোট গল্প তথা সাহিত্যকর্ম এতোটাই শক্তিশালী যে, তার শত্রুও তা অস্বীকার করতে পারেন না। কবি জয় গোস্বামীর কাছে ‘আল মাহমুদের সঙ্গে দেখা হওয়া আমার কাছে তীর্থ-দর্শনের শামিল’। আল মাহমুদকে কোণঠাসা করা যায় জামায়াত কানেকশনে, সেটাই করা হয়েছে। মূলত অর্থের কারণে তিনি জামায়াতের কাছে গেছেন। প্রগতিশীল দাবিদার দুর্বল কবি-সাহিত্যিকরা তাকে জামায়াতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। সংসারের দায়, একটি চাকরি জোটেনি আল মাহমুদের। সবাই দেখেছেন-জেনেছেন, সহায়তা করেননি কেউ। সুযোগটা নিয়েছে জামায়াত। আল মাহমুদের জীবন-দর্শন, বেঁচে-থাকা, টিকে থাকার সংগ্রাম, এতো সরল বিশ্লেষণের বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধ, মার্কসবাদ, জাসদ-গণকণ্ঠ, বঙ্গবন্ধু-শিল্পকলা, সংগ্রাম-জামায়াত এবং বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতা, ছোট গল্প, সবকিছু মিলিয়ে আল মাহমুদ। সরল অঙ্কবাজদের পক্ষে এই আল মাহমুদকে জানা-বোঝা অসম্ভব, যেভাবে হয়তো কিছুটা জেনেছেন- বুঝেছেন জয় গোস্বামী।
অর্থ বা ঠেলে দিয়েছেন বলে চলে গেছেন, এই যুক্তিতে দায়মুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। দায় অবশ্যই কবি আল মাহমুদকেই নিতে হবে। তার মূল্যায়ন এই অংশ বাদ দিয়ে করা যাবে না। আমাদের কবি-সাহিত্যিকরা (পাতিদের কথা বলছি না) যে আল মাহমুদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন, সেই অপরাধবোধ তাদের ভেতরে রয়ে গেছে। আল মাহমুদকে নিয়ে এখন যা ঘটছে, তারা প্রকাশ্যে এসে তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারছেন না। তারা সবাই পালিয়ে আছেন। উট পাখির মতো বালুতে মুখ লুকিয়ে আছেন। শারীরিকভাবে অনুপস্থিত আল মাহমুদও তাদের ভয়ের-ঈর্ষার কারণ হয়েই থাকলেন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :