মাসুদ রানা : জামায়াতে ইসলামীর সদ্য পদত্যাগী নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিবিসির সাথে সাক্ষাতকার বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী দলটির জন্যে ‘একেলিস হিল’। অর্থাৎ, তিনি গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর ট্রয়-বিজীয় বীর একেলিসের অমর দেহের অরক্ষিত দুর্বল স্থান পায়ের গোড়ালিতে তীরাঘাত পেয়ে মৃত্যুর উপমা টেনে বলতে চেয়েছেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা বাংলাদেশে রাজনীতিতে দলটির জন্যে মৃত্যুর কারণ। রাজ্জাক বলেন, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধী ভূমিকার জন্য তিনি জামায়াতকে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন এবং দলটির সংস্কার চেয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ, জামায়াতে ইসলামী এখনো পর্যন্ত অপরিবর্তনীয়।
ফলে, রাজ্জাক একদিকে সুপারিশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীকে বিলুপ্ত করার এবং অন্যদিকে সেক্যুলার কনস্টিটিউশন বা ধর্মনিরপেক্ষতা মেনেই রাজনীতি করার সুপারিশ করেছেন। যদিও তিনি জামায়াতের পরিবর্তন শর্তেও ফিরে যাওয়া সম্ভাবনা জোরের সাথে বাতিল করে দিয়েছেন, কিন্তু অন্য কোনো দলে যোগ দেওয়া কিংবা নতুন দলে গড়ে তোলার বিষয়টি অন্তত ভবিষ্যতের জন্যে নাকচ করে দেননি।
স্পষ্টত রাজাকারের অবস্থান শুধু রণকৌশলিক নয়, রণনৈতিকও বটে। বিবিসির পক্ষে সাক্ষাতগ্রহণকারী সাংবাদিকটি চাইলে পদত্যাগী এই জামায়াত-নেতার দার্শনিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আরও গভীরে প্রশ্ন করতে পারতেন। তাকে দৈর্ঘ্য-েপ্রস্থে-বেধে আরও প্রশ্ন করা জরুরি ছিলো। আমার মনে হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর একটি অংশের এই উপলব্ধি যে, দলের নামের চেয়ে দলের লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এবং সে-অনুসারে ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামে অপারেইট না করে অন্য নামে কিংবা অন্য আধারে অপারেইট করা কৌশলগতভাবে অধিক কার্যকর।
বিভিন্ন স্থানে জামায়াতে ইসলামীর লোকদের আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ কিনা, তা ভেবে দেখার দাবি রাখে। প্রসঙ্গত আওয়ামী লীগের ‘ইসলামি চেতনা’ এবং জামায়াতের মধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র যে প্রকাশ ও বিকাশ দেখা যাচ্ছে, তাতে তারা পরস্পরের জন্যে স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ আছে। লন্ডন, ইংল্যান্ড। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :