শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:১৫ দুপুর
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ‘শাস্তি’ শুধু নাম পরিবর্তন!

কালাম আঝাদ: সম্প্রতি একটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। মূলত দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর আগে ২০০৯ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়। ব্যাংকটিও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। শুধু নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করা যায় না বলেই মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আর্থিক সূচকের খারাপ অবস্থানে থাকা দুই বা ততোধিক ব্যাংককে প্রয়োজনে একীভূতকরণ (মার্জ) করতে হবে। পাশাপাশি এক-দু’জনকে নয় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে অধিকতর উদ্যোগী হতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)। ব্যাংক-কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেলেই নাম পরিবর্তন করতে পারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু নাম পরিবর্তন করলেই আর্থিক সূচকের পরিবর্তন হয় না। তাই প্রতিষ্ঠানে লেফাফাদূরস্তি সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ব্যবসার কথা বিবেচনায় এনে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা যেতে পারে। তবে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, দুদককে শক্তিশালী করা দরকার। তাদেরকে (দুদক) আরও উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে দুই বা ততোধিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একত্র (মার্জ) করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, স্বাধীনতার পরপর ব্যাংকগুলোর একত্রীকরণ আর নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল অর্থনীতির প্রয়োজনে।

জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হবার পর সরকার বাংলাদেশে ব্যাংক জাতীয়করণ অধ্যাদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন শুরু করে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দুটি শাখা অফিস ও ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ছিল। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশের শাখাই ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ নামে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে আবির্ভূত হয়। স্বাধীনতাপূর্ব ১২টি ব্যাংক একত্রিত করে ছয়টি সরকারি ব্যাংকে রূপান্তরের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে ব্যাংকিং খাত যাত্রা শুরু করে। সোনালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও ব্যাংক অব ভাওয়ালপুর এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক একত্রিত করে। অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় হাবিব ব্যাংক লিমিটেড ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সমন্বয়ে। জনতা ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড সংযুক্তির মাধ্যমে। রূপালী ব্যাংক স্থাপিত হয় মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড ও অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংককে একীভূতকরণ করে। পূবালী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন ও উত্তরা ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনের নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে দুর্নীতির দায়ে সর্বপ্রথম ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করা হয়। ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে ২০০৯ সালে ব্যাংকটির নতুন নাম আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে জাল-জালিয়াতির কারণে ২০০৬ সালে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। দুর্নীতির মামলায় ইতোমধ্যে ব্যাংকটির ৫ কর্মকর্তাকে ৬৮ বছর করে কারাদÐ দিয়েছেন আদালত।

অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির কারণে ফারমার্স ব্যাংক ২০১৭ সালে নিট লোকসান করে ৫৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটি ২০১৩ সালে যাত্রার পর নিট মুনাফা করেছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে মুনাফা হয় ৩ কোটি, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ও ২০১৬ সালে ২৩ কোটি টাকা। জালিয়াতির কারণে ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকরা আমানত ফেরত চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। কারণ ২০১৭ সালের শেষের দিকে ব্যাংকটির আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেশি ছিল। এমন ধারায় ব্যাংকটির আমানত কমে হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির ঋণ ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বড় অঙ্কের টাকা বের করা হয়েছে মূলত মতিঝিল ও গুলশান শাখার মাধ্যমে। এর মধ্যে মতিঝিল শাখার ঋণ প্রায় ১ হাজার ১শ কোটি টাকা ও গুলশান শাখার ঋণ ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা। ২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক যাত্রা শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আস্থার সংকটে আমানতকারীদের অর্থ তোলার চাপ বাড়ে। পরিস্থিতির অবনতি হলে পদ ছাড়তে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকটিতে জাল-জালিয়াতিতে জড়িতদের এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি। শুধু দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মাহবুবুল হক চিশতী।

গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ মোতাবেক ১৬ মাঘ ১৪২৫ রোজ মঙ্গলবার হতে তফসিলি ব্যাংকসমূহের তালিকায় ‘দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড’ এর নাম ‘পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড’ হিসেবে পরিবর্তন করা হয়েছে।

৩ ফেব্র য়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. সহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর ৪(১) ধারার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬ জুলাই ২০১৫ তারিখের ইস্যুকৃত ডিএফআইএম(এল)/৩৬ নং লাইসেন্সের মাধ্যমে অনুমোদনপ্রাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘সিএপিএম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এন্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড’ এখন হতে ‘সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড’ নামে অভিহিত হবে।

কোনো কোম্পানির (ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য নিবন্ধিত কোম্পানি) নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংশোধিত ব্যাংক-কোম্পানি আইন,১৯৯১-এর ১১৬ ধারার ব্যাংক-কোম্পানীর নাম পরিবর্তন অংশে বলা হয়েছে- কোম্পানি আইনের ১ [ধারা ১১] এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কেনো আপত্তি নাই এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র ব্যতীত ২ [কোনো ব্যাংক কোম্পানির নাম পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হইবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়