ডেস্ক রিপোর্ট : মৌসুমের প্রথম শিলাবৃষ্টিতে রাজশাহী, নাটোর ও হবিগঞ্জের অনেক গাছের আমের মুকুল ঝরে গেছে। গতকাল রবিবার ভোরের এই শিলাবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বজ্রপাতে মারা গেছে স্কুলছাত্রসহ চারজন। এ ব্যাপারে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
রাজশাহী : শিলাবৃষ্টির ফলে আমের মুকুল, সরিষা, মসুর, পেঁয়াজ, আম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুঠিয়ায় জিউপাড়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমের মুকুল ও ফসলের। ভোরে শিলাবৃষ্টি হলেও গতকাল দুপুর ১২টার দিকেও রাস্তার পাশে শিলা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
পুঠিয়ার জিউপাড়া এলাকার আনিসুর রহমান জানান, তাঁর প্রায় ৪৫টি আমগাছ আছে বিভিন্ন জাতের। এবার গাছগুলোতে বিপুল পরিমাণ মুকুলও এসেছিল। আমের ভালো ফলনের আশায় মুকুলগুলোর পরিচর্যাও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার ভোরের শিলাবৃষ্টিতে সেই মুকুলগুলো ঝরে গেছে।
ওই এলাকার কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিলাবৃষ্টির আঘাতে আমের মুকুল ঝরে পড়ায় লোকসান গুনতে হবে আমাদের। আম গাছে মুকুল যে পরিমাণ এসেছিল তাতে অন্যান্য বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল এবারও।’
এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, রবিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত রাজশাহী নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতও হয়েছে। রাজশাহীতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। এ জন্য কাজ শুরু করেছি আমরা।’
নাটোর : হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে নাটোরের তিনটি উপজেলায় আম-লিচুর মুকুল ঝরে গেছে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের এ শিলাবৃষ্টিতে পেঁয়াজ, রসুন, বোরো ধান, সরিষা, গম, কালাই, ভুট্টা, সবজি, পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘরের ক্ষতি হওয়াসহ বিভিন্ন পাখি মারা গেছে। ঋণ করে ফসল ফলিয়ে হঠাৎ এই শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।
কৃষকরা জানায়, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জেলার নলডাঙ্গা, সিংড়া ও সদর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় হঠাৎ করে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচু, পেয়ারা, সরিষা, গম, পেঁয়াজ, রসুন, বোরো ধান, কালাই, ভুট্টা, সবজি, পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে সকাল ১০টা পর্যন্ত টিনের চালা, খড়ের গাদা, রাস্তাসহ কোনো কোনো স্থানে শিল জমে থাকতে দেখা গেছে। শিলা পড়ে টিনের চালা ফুটা হয়ে গেছে।
শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, শিলাবৃষ্টিতে দুই হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
হবিগঞ্জ : বানিয়াচং উপজেলা সদরে টানা ২৫ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে আমের মুকুল ঝরে যাওয়াসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ৭টা থেকে টানা ২৫ মিনিট ধরে উপজেলা সদরের বড় বাজার এলাকায় এ শিলাবৃষ্টি হয়। উপজেলার গরিব হোসেন মহল্লার বাসিন্দা তৌহিদুর রহমান পলাশ জানান, শিলাবৃষ্টি শুরু হলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। রাস্তাঘাটে থাকা লোকজন আশ্রয় নেয় পাশের বাড়িতে। বৃষ্টিতে বোরো ফসলের তেমন ক্ষতি না হলেও বিভিন্ন স্থানে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে।
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : কেন্দুয়ায় ঝড়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ২৫টি বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রবিবার ভোরে উপজেলার দল্পা এবং আশুজিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায়। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
ইউএনও আল-ইমরান রুহুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাগুলোকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী : সোনাইমুড়ী উপজেলার ভাওরকোট গ্রামে বজ্রপাতে নোমান (৪৫) ও বাপ্পী (১৩) নামের স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছে। সম্পর্কে তারা জ্যাঠা-ভাতিজা। গতকাল রবিবার সকালে জ্যাঠা নোমান ও ভাতিজা বাপ্পী বাড়ির পাশের জমিতে পানি দিতে গেলে বজ্রপাতে দুজনই ঘটনাস্থলে নিহত হয়। কৃষক নোমান ভাওরকোট গ্রামের রহিম উদ্দিন হাজিবাড়ির আব্দুল মতিনের ছেলে, বাপ্পী নোমানের ছোট ভাই প্রবাসী বাবুলের ছেলে ও জয়াগ আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : আড়াইহাজারে বজ্রপাতে গতকাল ররিবার সকালে মোক্তার হোসেন (৩০) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি স্থানীয় উচিতপুরা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকার হাবিবুর রহমান হাবির ছেলে। তিনি বাড়ির পাশের ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতের কবলে পড়েন। পরে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৌলভীবাজার : কমলগঞ্জে বাড়ির পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় বৃষ্টিসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই আকস্মিক বজ্রপাতে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাত মিয়া (১২) নিহত হয়েছে। রিফাত কমলগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর রাসটিলা গ্রামের দিনমজুর জসিম উদ্দীনরে ছেলে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আরো তিন শিশু আহত হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
আপনার মতামত লিখুন :