আরএইচ রফিক,বগুড়া প্রতিনিধি: চলে গেলেন উত্তরাঞ্চলের সিংহ পুরুষ খ্যাত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আলহাজ মমতাজ উদ্দিন সিআইপি। ১৭ ফেব্রুয়ারি( রোববার) ভোররাত আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি ।(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন )। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৪ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন যাবত ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। রাতে তিনি অশুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধিন অবস্থায় ভোর রাতে মৃত্যু হয়।
তিনি স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ২ ছেলে এবং নাতী-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রোববার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. আহসান হাবিব তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে মমতাজ উদ্দিনের মৃত্যু ঘটনায় গোটা বগুড়ায় শোকের ছায়া নেমে আসে । তার মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে দলমত নির্বিশেষে শ্রেণি পেশার শত শত মানুষ তার বাড়িতে আসতে থাকে । এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যর অবতারনা হয় ।
অন্যদিকে তার প্রথম নামাজে জানাজা বাদ জোহর বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এবং দ্বিতীয় জানাজা নামাজ বাদ আছর শহরের মানিকচক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বগুড়ায় তার এই স্বরকালের জানাজা নামাজে হাজার হাজার মুশল্লি অংশ গ্রহন করেন। এসময় ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা ফুটবল খেলার মাঠে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ।
এর আগে তার মরদেহ ট্রাক বহরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আনা হয় । সেখানে সর্বস্তরের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টার শোক মিছিল করে শত শত নেতা কর্মী তার মরদেহ শহরের প্রাণকেন্দ্রের চির চেনা দলীয় কার্যলয়ে নিয়ে যান। এসময় আবারো সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যর অবতারনা হয় । এসময় সেখানে দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্য কান্নার রোল পড়ে যায়। সর্বস্তরের দলীয় নেতা কর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ বেশ কিছু সময় সেখানে রাখা হয়। পরে অশ্রুশিক্ত চোখে শোকার্ত মানুষ এই বীরকে বিদায় জানায় । পরে তার মরদেহ নেয়া হয় শহরের মানিকচক এলাকায় । বাদ আছর শহরের মানিকচক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার ২য় এবং স্বরনকালের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় ।পরে তাকে তার গ্রামের বাড়ী কদিমপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে এই বীরকে সমাধিস্থ করা হয় ।
মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বগুড়া জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন।
পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে মমতাজ উদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রায় এক দশক সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মমতাজ উদ্দিন।
২০০৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ও ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়র সদস্য (ক্রমানুযায়ী দ্বিতীয় সদস্য) নির্বাচিত হন।
এদিকে রাজনীতিবিদ ছাড়া মমতাজ উদ্দিন ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একাধিকবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) একাধিকবার পরিচালক নির্বাচিত হন।
তার এই মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আরো শোক প্রকাশ করেছেন বগুড়া চেম্বার এন্ড কমার্স, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহ অসংখ শ্রেণি পেশার মানুষ ।
আপনার মতামত লিখুন :