আনিসুল হক : কবি আল মাহমুদ বলেছিলেন, রাজনৈতিক কারণে আমাকে যদি কেউ পছন্দ নাও করেন, দেখা গেছে তিনিও আমার কবিতা পছন্দ করেন, আমার কবিতা তারও মুখস্থ। আল মাহমুদের কবিতা আমি পাতার পর পাতা মুখস্থ বলে দিতে পারবো। আশ্চর্য যে প্রথমা থেকে এ বছর প্রকাশিত আমার দুটো বইয়েই আল মাহমুদের ছড়া উদ্ধৃত করা আছে। এই পথে আলো জ্বেলে বইয়ে আছে তার দুটো ঊনসত্তরের ছড়া :
আল মাহমুদ লিখে চললেন : ঊনসত্তরের ছড়া
ট্রাক! ট্রাক! ট্রাক!/ শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে/ দুয়োর বেঁধে রাখ।/ কেন বাঁধবো দোর জানালা/ তুলবো কেন খিল?/ আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে/ ফিরবে সে মিছিল।/ ট্রাক! ট্রাক! ট্রাক!/ ট্রাকের মুখে আগুন দিতে/ মতিয়ুরকে ডাক।/ কোথায় পাবো মতিয়ুরকে/ ঘুমিয়ে আছে সে!/ তোরাই তবে সোনামানিক/ আগুন জ্বেলে দে!
চারদিকে আগুন। চারদিকে স্লোগান। চারদিকে মিছিল। চারদিকে প্রতিবাদ। এ রকম বাংলাদেশ কখনো দেখেনি কেউ। শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি-গায়ক সবাই নেমে পড়েছেন মিছিলে। ছাত্র মারা যাচ্ছে, শ্রমিক মারা যাচ্ছে, এমনকি পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে মায়ের কোলের শিশুও। কারফিউ জারি হচ্ছে প্রতিদিন।
আল মাহমদু আরো লিখলেন :
কারফিউ রে কারফিউ/ আগল খোলে কে?/ সোনার বরণ ছেলেরা দেখ্/ নিশান তুলেছে।/ লাল মোরগের পাখার ঝাপট/ লাগলো খোঁয়াড়ে/ উটকোমুখো শাস্ত্রী বেটা/ হাঁটছে দুয়ারে।/ খড়খড়িটা ফাঁক করে দে/ বিড়াল-ডাকে ‘মিউ’,/ খোকন সোনার ভেংচি খেয়ে/ পালালো কারফিউ।
আরো ‘সফল যদি হতে চাও’ বইয়ে আছে :
আম্মা বলেন, পড়রে সোনা/ আব্বা বলেন, মন দে;/ পাঠে আমার মন বসে না/ কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।/ তোমরা যখন শিখছো পড়া/ মানুষ হওয়ার জন্য,/ আমি না হয় পাখিই হবো,/ পাখির মতো বন্য।
আমি আমার অনেক লেখায় ও বক্তৃতায় এই লাইনগুলো পড়ে কিশোরদের বলি, এসো, আমরা পাখি হই, তাহলে আমরা সুন্দর মানুষ হবো, এই পৃথিবীতে এখন সুন্দর মানুষ বড় দরকার। আজ থেকে বহু বছর পরে আমরা কেউ থাকবো না, থেকে যাবেন আল মাহমুদ, থেকে যাবে তার কবিতা… কতোদূর এগোলো মানুষ! থেকে যাবে… সোনার দিনার নেই দেনমোহর চেয়ো না হরিণী। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :