প্রভাষ আমিন : শেষ বয়সে কবি আল মাহমুদের আদর্শচ্যুতি আমার জন্য বড় বেদনার। শুধু আমার জন্য নয়, বাংলা সাহিত্যের জন্যই এ বড় ক্ষতি। কবিদের আসলে সংসার করতে নেই। আট সন্তানের সংসার সামলাতে গিয়ে আল মাহমুদ হিমশিম খেয়েছেন, বারবার আপোস করেছেন, বারবার আদর্শ বদল করেছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যোগ দিয়েছেন জাসদে, মেধাবী তারুণ্যকে দেখিয়েছেন ভুল বিপ্লবের স্বপ্ন। প্রুফরিডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা আল মাহমুদ জাসদের মুখপত্র গণকণ্ঠের সম্পাদক ছিলেন, কারাভোগও করেছেন। আবার বঙ্গবন্ধুই তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরিও দিয়েছেন। সেই চাকরি করেই অবসরে গেছেন। তার চূড়ান্ত অধঃপতন ঘটে আশির দশকে। শেষ বয়সে তিনি আকড়ে ধরেন মৌলবাদকে। নৈকট্য বাড়ে জামায়াতের সাথে। সেই ফাঁদ থেকে আর বেরুতে পারেননি আল মাহমুদ।
আদর্শে-বিশ্বাসে যোজন যোজন ফারাক, তবুও আল মাহমুদের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি যতোটা দিতে পারতেন, দেননি পুরোটা। তবুও যা লিখেছেন, তাতেই সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্য। জীবনানন্দ দাসের পর আর কে আল মাহমুদের মতো করে প্রকৃতিকে, মাটির গন্ধকে তুলে আনতে পেরেছেন কবিতায়? তিনি আমাদের সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তার নিজের আদর্শে নয়, তিনি বেঁচে থাকবেন তার কাব্যে। কবিতাই তাকে অমরত্ব দেবে। নিশ্চয়ই একশো বছর পর মানুষ আল মাহমুদকে পাঠ করবে আরো নির্মোহভাবে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা আল মাহমুদকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি সাহিত্যের মূলধারায়। তবুও বাংলাকে চিনতে আমাদের বারবার ফিরে যেতে হবে আল মাহমুদের কাছেই। চলুন, আল মাহমুদকে স্মরণ করি তার কবিতায় :
আম্মা বলেন পড় রে সোনা
আব্বা বলেন মন দে;
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।
আমার কেবল ইচ্ছে জাগে
নদীর কাছে থাকতে,
বকুল ডালে লুকিয়ে থেকে
পাখির মতো ডাকতে।
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
কর্ণফুলির কূলটায়।
দুধভরা ওই চাঁদের বাটি
ফেরেস্তারা উল্টায়।।
তখন কেবল ভাবতে থাকি
কেমন করে উড়ব,
কেমন করে শহর ছেড়ে
সবুজ গাঁয়ে ঘুরব!
তোমরা যখন শিখছ পড়া
মানুষ হওয়ার জন্য,
আমি না হয় পাখিই হব,
পাখির মতো বন্য।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :