অজয় দাশগুপ্ত : তিনি যখন কবিতা লিখতেন তখন কবিরা রাজকবি হতে শেখেনি। বাংলা কবিতার প্রেম ও দ্রোহ এই দুই ধারা বুকে নিয়ে লিখতেন বলেই লিখতে পেরেছিলেন, বধূ বরণের নামে দাঁড়িয়েছে মহামাতৃকুল/গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল।
লিখেছেন, ‘এশিয়ায় যারা আনে কর্মজীবী সাম্যের দাওয়াত তাদের পোশাকে এসো এঁটে দিই বীরের তকমা’। আপনারা তাকে মনে রাখার কে, হে? একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া তিনি তখন ইত্তেফাকে ছোট একটা কাজ করতেন। পা-ুলিপি সাথে নেয়ার সময় না তখন। সেসব ড্রয়ারে ফেলে কলকাতা যাওয়া কবির বই বের করার ঘোষণা দেয় অরুণা প্রকাশনী। তার কবিতা পকেটে করে এনে জমা দিয়ে গেছিলেন বর্ধমানের কৃষক। তার কবিতা পড়ে চমকে উঠেছিলেন দ্ুঁদে সম্পাদক সাগরময় ঘোষের মতো মানুষ।
আপনারা তো তারাই যারা মনে করেন কবিতা মানে হয় বন্দনা নয় স্লোগান। পায়ে মাখতে মাখতে রাজপথে নামাতে নামাতে বাংলা কবিতার কী চেহারা করেছেন দেখেছেন কখনো? তিনি তা করেননি।
বড় বড় আদর্শের বুলি আওড়ান। বুকে জড়িয়ে রাখা পাকি খেলোয়াড় গালে আঁকা পাকি পতাকার দিকে তাকিয়েছেন একবারও? আপনারা আইয়ুব খানের নামে লেখা কবিতার লাইন পাল্টে বঙ্গবন্ধুর নাম করে দিয়ে দেশপ্রেমিক। তিনি এমন কিছু করেননি, করতে জানতেন না। পারলে পানকৌড়ির রক্ত বা জলবেশ্যার মতো গল্প লিখে দেখান। যৌবন জীবনকে কামরাঙা করে তুলুন তো দেখি?
তার ঘোর অভাবের সংসার ছিলো। আজীবন কাব্য হিংসা, কবি হিংসার শিকার ছিলেন। তেল দেয়ার ভাষাও হয়তো রপ্ত করতে পারেননি। গেটআপও কেমন ধার্মিক টাইপের। তাই সব মিলে একঘরে করে কী আনন্দে কাটালেন এতোগুলো বছর।
তার পরিবর্তন বা আদর্শিক বিচ্যুতি কখনো সমর্থন করিনি। করবোও না। জাপান ও হিটলারের সাথে যাওয়া বাঙালি বীর সুভাষ বসুকে আপনি অস্বীকার করেন? শেষ জীবনে বিজেপি করা ভূপেন হাজারিকার গান আপনাকে উদ্বেলিত করে না? তার কবিতাও করবে আজীবন অনাদিকাল।
তার রাজনৈতিক স্খলন বা পতন আমার আলোচনার বিষয় নয়। এ দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও আমরা স্বাধীনতাবিরোধী হতে দেখেছি। এমন কোনো দল নেই জামায়াতীদের সাথে গলাগলি করেনি। তাদের বেলায় মাফ থাকলে তার বেলায় কঠোর কেন? আমি সবসময় তার কবিতার ভক্ত। থাকতে যেমন চলে যাবার পরও তাই আছি। আল মাহমুদ, বিচিত্র সমাজ ও অদ্ভুত এক দেশে জন্মেছিলেন আপনি।
এমন কবি বাংলা সাহিত্যে বারবার জন্মায় না যিনি লিখবেন, কবিতা চরের পাখি, কুড়ানো হাঁসের ডিম,গন্ধভরা ঘাস, স্নানমুখ মেয়েটির দড়ি ছেঁড়া হারানো বাছুর কবিতা তো মক্তবের মেয়ে চুলখোলা আয়েশা আক্তার।
আপনাকে শেষ বিদায় জানাই শ্রদ্ধা ও প্রণামে। মার্জনা করবেন রাজনীতি আক্রান্ত আক্রোশপ্রিয় আমাদের। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :