শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৫৮ রাত
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আল মাহমুদ : উচ্চতা আর দার্শনিক বদলের প্রতীক হয়েই তিনি স্থায়ী থাকবেন বাংলা সাহিত্যে-ভাষায়

‘আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন,/ পরম স্বস্তির মন্ত্রে গেয়ে ওঠো শ্রেণির উচ্ছেদ,/ এমন প্রেমের বাক্য সাহসিনী করো উচ্চারণ/ যেন না ঢুকতে পারে লোকধর্মে আর ভেদাভেদ।’
এই সনেটের অংশটি শুধু সাহিত্যের অংশ হয়েই থাকেনি। গত কয়েক দশক এটি যেমন প্রতিনিধিত্ব করেছে বাংলা ভাষার একজন প্রধান কবির স্বাক্ষর হিসেবে, তেমনই এই কয়েক লাইন হয়ে উঠেছিলো সময়ের দেয়াল লিখন বা চিরন্তন বাঙালির অসাম্প্রদায়িক সমাজের ভাবনার প্রতীক হিসেবে। কবি আল মাহমুদের জীবন, বিশ্বাস ও রাজনৈতিক দর্শনের বাঁক বদলেও একটুও অনুজ্জ্বল হয়নি তার কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালী কাবিন’। কবি বদলে গেলেও বদলে যায়নি কবির সেই কবিতাগুলো-‘সোনালী কাবিন’ তাকে এনে দিয়েছিলো আধুনিক বাংলা কবিতার দরবারে তার স্থায়ী আসন।
প্রথমজীবনে সাম্যবাদে বিশ্বাসী কবি আল মাহমুদের রাজনীতির বিশ্বাস বদল ঘটেছে একদমই বিপরীত মুখে। ফসলের সুষম বণ্টনের স্বপ্ন দেখা এই কবি একপর্যায়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কাজ করেছেন সেই দলটির খবরের কাগজ ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায়। তাকে দেখা গেছে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও। তার লেখারও মোড় ঘুরেছে বিভিন্ন সময়ে। বিডি নিউজের সাহিত্য বিভাগ ‘আর্টসে’ কবি আল মাহমুদের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিলো। রাজু আলাউদ্দিনের নেয়া উনিশশো নিরানব্বই সালের সেই আলাপচারিতা বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবির দার্শনিক বদলের প্রামাণ্য হয়ে আছে। তার অংশবিশেষে...
রাজু: ঠিক আছে। আপনার সম্পর্কে ভুল বা সঠিক যেটাই হোক না কেন তা হলো আপনি জামায়াতের সক্রিয় সদস্য কিনা? মাহমুদ: না। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। রাজু: তাহলে জামায়াত আপনার পৃষ্ঠপোষক কেন? মাহমুদ: আমি দৈনিক সংগ্রামে চাকরি করি। আপনি তো জানেন আমি সরকারি কর্মচারী হিসেবে রিটায়ার করেছি। লিখেটিখে খেতে হয় আমাকে। সংগ্রামে লিখি, পালাবদলে লিখি এবং আরও কয়েকটা পত্রিকায় লিখেটিখে খাই। এখন আপনি বলছেন যে তারা পৃষ্ঠপোষক কিনা। হতে পারে। আমি যেহেতু ধর্মে বিশ্বাস করি, ধর্মের কথা বলি, শুধু এখানেই নয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। তারা আমাকে সমর্থন করে। রাজু: তারা ভাবে যে আপনি তাদের লোক। মাহমুদ: তারা হয়তো ভাবতে পারে। তাদের লোক বলে আমাকে ভাবে কিনা সেটা তো আমি আর তাদের মনের কথা জানি না। রাজু: তাদের মনের মানুষ ভাবে আপনাকে। মাহমুদ: আমাকে তারা ভালোবাসে। রাজু: ভালোবাসে? সাধারণত ভালোবাসা তখনই ঘটেÑ একটা লোককে আমরা ভালোবাসি কেন? কিংবা আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে কেন? ভালো লাগে এই কারণে যে, মনে হয় যেন এটা আমার মনের কথা। তো ওরা যে আপনাকে ভালোবাসে, তার মানে ওদের মনের সঙ্গে আপনার মনঃগঠনের কোনো ঐক্য আছে বলেই কী ভালোবাসে? মাহমুদ: আমি আগেই বলেছি যে আই অ্যাম নট এ পলিটিশিয়ান। আমি যেহেতু ইসলামে বিশ্বাস করি ইসলামের কথা বলি। রাজু: ইসলামের নাকি ‘জামায়াতে ইসলামী’র? মাহমুদ: না, এই ধরনের প্রশ্ন করা সঠিক নয়। দলকে নিয়ে একজন কবিকে এই ধরনের প্রশ্ন করা কী সঠিক? আমি তো আগেই বলেছি আমি রাজনীতিক নই। রাজু: কিন্তু আপনাকে তো জামায়াতে ইসলামীর অনেক দলীয় কর্মকা-ে দেখা গেছে। মাহমুদ: না, এটা আপনি ঠিক বলেননি। রাজু: অনেক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে, আপনি সভাপতিত্ব করছেন বা গেস্ট হিসেবে আছেন। মাহমুদ: আমি হয়তো তার কোনো ছাত্র সংগঠনের কালচারাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছি। অনেক ছাত্র সংগঠনেই আমি করে থাকি। কিন্তু যেহেতু আমি কোনো একসময় বা কোনো একবার বা দুইবার বা তিনবার তাদের একটা অনুষ্ঠানে গেছি তাতে আমাকে এভাবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। রাজু: আপনি জামায়াতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন কিনা? মাহমুদ: জামায়াতের রাজনীতি কী, সেটা আমার কাছে প্রথম ব্যাখ্যা করতে হবে। তাহলে আমি বুঝতে পারবো আমি সমর্থক কিনা। জামায়াতে ইসলাম ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী শরিয়ত প্রচলনের জন্য রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে। আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, আমি একজন কবি। কোথাও যদি তাদের সাথে আমার মিল হয় সেটা তো ভালো কথা আমি মনে করি, অসুবিধা কী এবং তারা যদি সেকারণে আমাকে খানিকটা পৃষ্ঠপোষকতা দেয় তাহলে সেটা আমার লভ্য, এটাকে বলি না যে এটা দোষনীয়। যেহেতু তারা আদর্শগতভাবে আমার কবিতা বা আমাকে সমর্থন দেয় তাহলে এটা দোষণীয় মনে করি না। এ কারণে আমাকে রাজনীতি করতে হবে বা রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, এটা জরুরি নয়। রাজু: না কিন্তু ওদের রাজনীতিতে আপনি বিশ্বাস করেন কিনা? মাহমুদ: আমি ইসলামে বিশ্বাস করি। জামায়াতে ইসলাম দেশের নানা ঘটনায় নানা রকম রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালায়, এটার সাথে ইসলামের সম্পর্ক থাকতেও পারে। নিশ্চয় থাকবে, কারণ তারা তো ইসলামী দলই। রাজু: এটা কোন ইসলাম? কারণ হচ্ছে, সেভেনটি ওয়ানে ওরা যখন স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করলো তখনও কিন্তু তারা বলছে যে, ইসলাম রক্ষা হলো তাদের মূল দায়িত্ব। সেখানেও কিন্তু তারা ‘ইসলাম’কে ব্যবহার করছে। মাহমুদ: জামায়াতে ইসলাম ইসলামের স্বার্থেই কোনো একসময়ে মানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ছিলো শেখ মুজিবের বা আওয়ামী লীগের অপজিট দল। রাজু: এখানে আমি একটু বলি : সেভেনটি ওয়ানে ওদের ভূমিকা কেবল আওয়ামী লীগের, শেখ মুজিবের বিপক্ষে নয়, ওটা প্রকারান্তরে গোটা জাতির স্বার্থের বিপক্ষে চলে গেছে। মাহমুদ: এটা আমি ঠিক সম্পূর্ণভাবে সঠিক মনে করি না। রাজু: যদি এটা সঠিক না হয় তাহলে সেভেনটি ওয়ানের যে অর্জন সেটা কী আওয়ামী লীগের অর্জন নাকি এই জাতির অর্জন? মাহমুদ: মনে রাখতে হবে যে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাজু: সেজন্যই তো আপনি এর উত্তর দিবেন। মাহমুদ: তখনকার জামায়াতে ইসলামীর, আমার যেটা ধারণা, আমি কিন্তু রাজনীতির লোক নই আগেই বলে নিচ্ছি। আমার ধারণা যেটা পাকিস্তানের যে-ঐক্য, যে ভাব-কল্পনা , এটার অনুসারী ছিলো তারা, সেটা তারা রক্ষা করতে চেয়েছে এবং সেজন্য শেখ মুজিবের রাজনীতির বিরোধিতা করেছে এবং বিরোধিতার পরিণাম তারা ভোগ করেছে। রাজু: কী পরিণাম ভোগ করেছে? আমি তো কোনো পরিণাম দেখি না। মাহমুদ: তাদের অসংখ্য লোক মারা গেছে। রাজু: আর তারা যে অসংখ্য লোক হত্যা করছে, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণে সহযোগিতা করছে, অনেক লুটপাট করছে। মাহমুদ: এ বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন না করাই ভালো। রাজু: আপনি মুক্তিযোদ্ধা, ফলে আপনি এসব বিষয়ে বলতে পারেন। মাহমুদ: এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন না করাই ভালো। রাজু: আপনি বলতে অনাগ্রহী কেন? মাহমুদ: অনাগ্রহী নই, আমি যে বিষয়টা কম জানি সেটা বলতে চাই না। এটা একটা রাজনৈতিক কর্মকা-।
অনেক আলোচনা, সমালোচনার একটা জীবন পাড়ি দিয়ে প্রয়াত হলেন কবি আল মাহমুদ। তার সৃষ্টি বাংলা ভাষার অমূল্য সম্পদ হয়েই রইবে, একইসাথে তার দর্শনের বদল হয়ে থাকবে এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন-যা কবি আল মাহমুদের উচ্চতাকে বারবার আঘাত করবে-প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাবে। উচ্চতা আর দার্শনিক বদলের প্রতীক হয়েই তিনি স্থায়ী থাকবেন বাংলা সাহিত্যে-ভাষায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়