শিরোনাম
◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৩৬ সকাল
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফিরে দেখা বাংলাদেশের নির্বাচন

মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন

২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নির্বাচিত হলেন, তখন তিনি দারিদ্র্য হ্রাস, উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশকে ডিজিটাল যুগে নিয়ে যাওয়া- এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত এক দশকে সেসব বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ হয়েছে। চরম দারিদ্র্য একবারে অর্ধেকে নেমে এসেছে। নারীরা অনেক সহজে শিক্ষা পাচ্ছে, নিরাপত্তা পাচ্ছে। এসব কারণেই প্রধানমন্ত্রী এবং তার আওয়ামী লীগ যে গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে, তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছে- সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ছিলো না।

আন্তর্জাতিক কিছু মিডিয়া অবশ্য এই বিজয়ের দিকে কিছুটা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। তারা বুঝতে পারেনি- একটি দলকেই কেন ভোটারা বারবার ক্ষমতায় পাঠাচ্ছে। তবে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি যেভাবে হয়েছে, তার দিকে একটু ঘনিষ্ঠভাবে নজর দিলেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।

একাধিক জরিপেও কিন্তু আওয়ামী লীগের বিজয়ের বিষয়গুলো বোঝা যাচ্ছিলো। প্রশ্ন হচ্ছে এমন ব্যাপক জনপ্রিয়তার পেছনে কারণটা কী? আসলে শেখ হাসিনের শাসনামলে বাংলাদেশিরা অস্বাভাবিক গতিতে উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে। গত প্রায় এক দশক ধরে দেশের অর্থনীতি গড়ে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত বছর এটা ছিলো ৭.৮৬ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২১.৮ শতাংশে নেমে গেছে। একই সময়ে মাথাপিছু আয় স্পর্শ করেছে ১৭৫০ ডলারকে।

বিকাশমান এই অর্থনীতির কারণে মানুষের বিশেষ করে মেয়েদের, কাজের সুযোগ বেড়েছে। মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার ২০০৮ সালে যেখানে ছিলো ৫৭ শতাংশ, ২০১৭তে সেটা হয়েছে ৯৫.৪ শতাংশ।

লিঙ্গভিত্তিক সমতার ক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যে তালিকা প্রকাশ করে থাকে তাতে গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে। এর আগের বছরও ছিলো একই জায়গায়। আর নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম স্থানে।

তবে বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে দেখা গেছে রাজনৈতিক সহিংসতা। তারপরও গত বছর দেশকে শান্ত রাখতে সরকার সবকিছুই করেছে। বড় ধরনের অপরাধের জন্য কর্তৃপক্ষ অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে। তবে এর মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কোনো গ্রেপ্তার হয়নি, হয়নি কোনো গণগ্রেপ্তারও।

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ভোটের সাত দিন আগে থেকেই দেশজুড়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। বিরোধী দলের দাবির প্রেক্ষিতেই নামানো হয় সেনাবাহিনীকে। তারপরও নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিরোধীদের দ্বারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হয়। এ ধরনের হামলায় সারাদেশে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নিহত এবং তিনশোজনের মতো আহত হয়। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় আওয়ামী লীগের আটজন কর্মীসহ সতেরোজন নিহত হয়। তারপরও এই নির্বাচনটি আগের দু’টি জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় শান্তিপূর্ণ ছিলো।

২০০৮ এর নির্বাচনে সময় একশো আটজনের মৃত্যু হয়েছিলো। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনটি ছিলো আরও বেশি রক্তাক্ত। সেবার বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং উল্টো সেদিনই দেশজুড়ে ধর্মঘট ও অন্যান্য সহিংসতা করেছিলো। তারা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র, বাস এবং রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগুন দিয়েছিলো। বিএনপি সমর্থিত হামলায় দুইশো একত্রিশ জন নিহত হয়, আহত হয় আরও এক হাজার একশো আশিজন।

এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিজয়ী বিএনপি এবং তাদের সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল এবং সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়। সেসময় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলো।

কিন্তু ২০১৮ সালে বিজয়ের পর এর ঠিক উল্টোটাই করেছে বিজয়ী আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর কোথাও কোনো সহিংসতা দেখা যায়নি। এটাকে অনেকেই ইতিবাচক পরিবর্তন বলে অভিহিত করেছেন। এই পরিবর্তনকে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতেই এক নতুন পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আর বাংলাদেশের মানুষ জানে, এই পরিবর্তনের কৃতিত্ব কার। তিনি আর কেউ নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ। আর এটাই একমাত্র কারণ যে, জনগণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে আবারও শেখ হাসিনাকেই ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে।

(লেখক : জাতিসংঘে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর। লেখটি সম্প্রতি ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে।)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়