আর রাজী : বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার জন্য মোটা দাগ দিয়ে যে কারণটাকে গ্রহণ করেছি সেটি হচ্ছে তার জনগণের ভাষার অধস্তনতা। বিষয়টা একসময় এমন গভীরভাবে এই ভূ-ভাগের চিন্তকদের আলোড়িত করেছিলো যে, তারা নিজের মাতৃভাষার মর্যাদার দাবিতে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। এরই ধারাবাহিকতায়, এই এক দাবি বাস্তবায়নের লড়াইয়ে একটা ভূ-খ-কেই স্বাধীন করে ফেলে বাংলা ভাষার ব্যবহারকারীরা। এভাবেই পৃথিবীর অন্যতম ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন ঘটে এ ভূ-ভাগে।
ফলত বাংলা ভাষায় রচিত এই রাষ্ট্রের সংবিধানে, একেবারে শুরুতেই সুস্পষ্ট করে লেখা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। কিন্তু এখানেও একটা ফাঁকির বীজ বুনে রেখে দেয় ‘শিক্ষিত-বাঙালি’। রাষ্ট্রের ভাষা বাংলা স্বীকৃত হয় বটে, কিন্তু শিক্ষিত-বাঙালির প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতায় এই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ভাষা হিসেবে রয়ে যায় অধিকাংশ মানুষের অবোধ্য-অগম্য ভাষা- ইংরেজি।
এ দেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা ‘রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা’ আপনাকে আহম্মক বানিয়ে দেবে। দেখেন রাষ্ট্রের কী অদ্ভুত এক সংজ্ঞা লেখা আছে আমাদের সংবিধানে- ‘রাষ্ট্র বলিতে সংসদ, সরকার ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ অন্তর্ভুক্ত;’।
আমাদের সংবিধান বলছে, রাষ্ট্রের মধ্যে বিচার বিভাগ নেই! সুপ্রিম কোর্ট নেই! এ অবস্থায় ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ বা বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের দোহাই দিলেই কী সর্বোচ্চ আদালতের ভাষা ইংরেজির বদলে বাংলা হয়ে যাবে? আর মানুষ যদি তার বিচারটাই নিজের ভাষায় বুঝে নিতে না পারে তাহলে এই রাষ্ট্র দিয়ে সে কী করবে? যে রাষ্ট্র তার মালিকের ভাষায় কথা বলে না সে রাষ্ট্র তো বেয়াড়া ও বিপদগামী হবেই।
এ কি সাধারণ মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা নয়? প্রতারণা নয়? এই প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শিক্ষিত-বাঙালি ছাড়া আর কে দায়ী? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :