আমিন মুনশি : ঋতুর বৈচিত্র্য, প্রকৃতির রকমফের এবং সময়ভেদে বিচিত্র শস্য উৎপন্ন হওয়া মহান আল্লাহর নিদর্শন। কোরআন পাকে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখবে অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি যখন তার উপর বৃষ্টিবর্ষণ করি, তখন সে শস্যশ্যামল ও স্ফীত হয়। নিশ্চয় যিনি একে জীবিত করেন, তিনি জীবিত করবেন মৃতদেরও। নিশ্চয় তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।’ (সূরা হা-মীম সাজদা : ৩৯)
শীতের জরাগ্রস্ত প্রকৃতির বসন্তে প্রাণচঞ্চল হওয়ার কথাই প্রকারান্তরে এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। কেননা, আমাদের দেশে শীতে সাধারণত প্রকৃতি অনুর্বর থাকে। বসন্তে তা সজীব-শ্যামল হয়ে ওঠে। এছাড়াও এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানবসম্প্রদায়কে বিশ্বপ্রকৃতির আলোকে মানবপ্রকৃতি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞানদান করেছেন। আয়াতের শেষাংশ ‘নিশ্চয় যিনি একে জীবিত করেন, তিনি জীবিত করবেন মৃতদেরও। নিশ্চয় তিনি সবকিছু করতে সক্ষম’ বলে বিশ্বপ্রকৃতি থেকে মানবসমাজকে শিক্ষাগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি প্রচ্ছন্নভাবে এ উপদেশ দিচ্ছেন যে, আল্লাহ নির্জীব বিশ্বপ্রকৃতিকে যেভাবে সজীবতা দান করেন, তেমনি তিনি মৃত মানুষকে জীবিত করবেন। মৃত্যুর পরে উত্থান এ ক্ষেত্রে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে মানবপ্রকৃতির ঐক্য রয়েছে। এটি ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আল্লাহ কীভাবে মৃতকে জীবনদান করবেন এবং সৃষ্টিজগতে এর উদাহরণ কী?’ রাসুল (সা.) প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘তুমি কি শস্যহীন ভূমিতে চলাচল করনি, যেখানে পরে শস্যে আলোকময় হয়েছে?... এভাবেই আল্লাহ মৃতকে জীবনদান করবেন। এটাই সৃষ্টিজগতে পুনরুত্থানের নিদর্শন। (মুস্তাদরাক হাকিম)
প্রকৃতি থেকে শিক্ষাগ্রহণের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন শরিফের বিভিন্ন স্থানে আদেশ করেছেন। যথা- ‘বল, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর; এবং দেখ, কীভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।’ (সূরা আনকাবুত : ২০)
অন্যত্র বলেন- ‘তিনিই আকাশ থেকে পানিবর্ষণ করেছেন, অতঃপর আমি এর দ্বারা সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙুরের বাগান, জয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ কর, যখন সেগুলো ফলবান হয় এবং তার পরিপক্বতার প্রতি লক্ষ কর। নিশ্চয় এগুলোতে রয়েছে নিদর্শন ঈমানদারদের জন্য।’ (সূরা আনআম : ৯৯)
প্রখ্যাত হাদিসশাস্ত্রবিদ ও ভাষাবিদ আবদুল মালিক আসমায়ী (১২১-২১৬) জনৈক আরব বেদুইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কীভাবে আল্লাহকে চিনলে?’ বেদুইন জবাবে বললেন, ‘গোবর দেখে উট চেনা যায়, পদচিহ্ন দেখে পথিকের সন্ধান লাভ করা যায়, অথচ সুউচ্চ আসমান ও সমতল ভূমি দ্বারা এসবের সন্ধান লাভ করা যাবে না!’ (লাওয়ামিউল আনওয়ার)