নূর মোহাম্মদ : অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। বিচার শেষ হচ্ছে না, আবার জামিনও হচ্ছে না। অনেকেই কারাগারে রয়েছেন মিথ্যা মামলায়। অনেকেই কারাগারে রয়েছেন বছরের পর বছর কিন্তু কোন সাক্ষি হচ্ছে না। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মুক্তির ব্যবস্থা হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে।
তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি মিললেও ক্ষতিপূরণ পাননি ক্ষতিগ্রস্থ কেউ। সম্প্রতি দুদকের মামলায় তিন বছর কারাবাসের পর জাহলামের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। হাইকোর্টের আদেশে মুক্তি মিললেও ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আদালত কোন নির্দেশনা দেননি।
এদিকে দীর্ঘ তিন বছর বিনা অপরাধে কারাভোগের জন্য জাহালমকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। গত ৯ ফেব্রæয়ারি সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন রাজধানীতে মানববন্ধন করে এ দাবি জানান।
এর আগে বিলম্বিত ও বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক থাকা আসামিদের মুক্তির পর ক্ষতিপূরণ দিতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কথা যুক্তি তুলে ধরেছিলেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমও। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সংবাদ সম্মেলনে হাইকোর্টের এ বিচারপতি বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেলেও তারা অর্থের অভাবে কিছু করতে পারে না। তাই ক্ষতিপূরণ দেওয়া দরকার।
আর ২০১৭ সালের ৮ মার্চ সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা বিনা অপরাধে কারাগারে আটক রয়েছেন তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। তবে কারাগারে এমন আসামির খোঁজ মাঝে মধ্যেই মিলছে। তাই কোন ব্যক্তি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে এখনই আইন করার কথা জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। তারা বলেন, আইনে থাকলে নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পেতে হয়রানী হতে হবে না। অন্যথায় তাকে ক্ষতিপূরণ পেতেও হয়রানীর শিকার হতে হবে।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে আইন হওয়া উচিৎ। কারণ একজন আসামি সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে খালাস পেলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্ন আসে না। তবে যে তদন্ত কর্মকর্তা উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া চার্জশিট দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। যাতে সুষ্ঠু তদন্ত না করে কেউ চার্জশিট দিতে সাহস না পায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, সঠিকভাবে আইন অনুযায়ী সব কিছু করা হলে কেউ হয়রানীর শিকার হয়না। তবে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ। কারণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাকে ন্যায় বিচার দেওয়া। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, সংবিধানে সবার মৌলিক অধিকারের কথা বলা আছে। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই রাষ্ট্রকেই এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। আর আইন না হওয়া পর্যন্ত রিট দায়েরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :