রমজান আলি: অর্থাভাবে বন্ধ রয়েছে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান এঞ্জেলস কম্পোজিট নিটিং। বেকার হয়েছে সহস্রাধিক কর্মরত মানুষ। আর এজন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে অসহযোগিতার অভিযোগ এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, ব্যাংকটি সময়মত ঋণ পুনঃতফসিল না করা, প্রণোদনার কাগজপত্র জমা না দেওয়া ও এলসি বন্ধ করে দেওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। আর এবি ব্যাংক বলছে আইনের মধ্যে থেকেই সবকিছু করা হয়েছে। বাংলাদেশ-স্পেন যৌথ মালিকানাধীন এঞ্জেল কম্পোজিট নিটিং ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এঞ্জেলস কম্পোজিট ও এবি ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ২৭ আগস্ট এবি ব্যাংকটির মতিঝিল শাখার মাধ্যমে তারা ১১ কোটি টাকার ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র প্রদান করে। এলসি অনুযায়ী পণ্যও রপ্তানি করা হয়। ২০০৯ সালে পণ্য রপ্তানির প্রণোদনার ২ কোটি টাকার কাগজপত্র জমা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এবি ব্যাংক সেই কাগজ বাংলাদেশ ব্যাংকে না পাঠানোয় প্রণোদনার টাকা পায়নি এঞ্জেলস নিট। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে এলসি’র লিমিট থাকলেও ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এলসি খুলতে না পারায় কয়েক কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে যায়।
কোম্পানিটির সাথে এবি ব্যাংকের সম্পর্কের অবনতি হলে এলসি মার্জিনের পুরো অর্থ সমন্বিত করে উচ্চ সুদহারে ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ‘ফোর্স লোন’ সৃষ্টির মাধ্যমে এঞ্জেলস কম্পোজিটের বিপরীতে দেনা দেখায়। এছাড়া ২০১১ সালে নিয়ম থাকলেও ঋণ পুনঃতফসিল না করে ২০ শতাংশ হারে সুদ কর্তন করা হয়। ২০১৬ সালে ঋণ পুনঃতফসিল করে এবি ব্যাংক।
২০১৭ সালের শেষাংসে অন্য একটি কোম্পানির সহায়তায় এঞ্জেলস কম্পোজিট চালু হয়। তখন তারা এবি ব্যাংকের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ি ৪০ টাকা প্রতি কিস্তি হিসেবে ৬০ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করার বিষয়ে সম্মত হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পর ৩৬ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে তফসিল দেয় এবি ব্যাংক। অন্যদিকে ঋণ সংক্রান্ত ঝামেলা ও এলসি খুলতে না পারা ও আর্থিক অভাবে বন্ধ হয়ে যায় এঞ্জেলস নিট কম্পোজিট।
এ বিষয়ে এঞ্জেলস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন মুরাদ জানান, ঋণ সমন্বয়ের বিষয়ে নানা দেনদরবার করেও ব্যাংক কোনো ধরণের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বরং ব্যাংকের কোপানলে পড়ে এলসি মার্জিনের পুরো অর্থ ঋণ দেখিয়ে এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় এখন কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য তিনি সরাসরি এবি ব্যাংকের অসহযোগিতা ও অনিয়মকে দায়ি করেন।
এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাইজার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমার সব ফিগার মুখস্থ নেই। তাই এসব বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমাদের খেলাপি ঋণ বেড়েছে, এটা ঠিক। এজন্য আমরা প্রভিশনও করেছি। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধের ভেতরে থেকেই আমাদের সব কিছু করতে হয়।
তবে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ বছরের কিস্তির অনুমোদন না দেওয়ায় সেটা ৩ বছর করা হয়েছে। আর ঋণ পুনঃতফসিলের নিয়ম থাকার পরেও ৪ বছর দেরি হয়েছে কোনো না কোনো আইনের ঝামেলায়। সম্পাদনা: শাহীন চৌধুরী