শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৮:৪৯ সকাল
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৮:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইউএনওর প্রশ্ন ‘আমার এই নিষ্পাপ সন্তানটার কি অপরাধ ছিল?’

মনজুর এ অনিক, নারায়ণগঞ্জ: সদ্য ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হওয়ার নেপথ্যে সন্তানসম্ভবা হওয়ায় নিজের অযোগ্যতাকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) হোসনে আরা বীণা। তার এ হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

কারণ, বহুল প্রত্যাশিত যেই অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় বছরের পর বছর অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছিল তাকে, সদ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদবিরে এই ওএসডি হওয়ার সংবাদে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ৫ মাসের অন্ত:স্বত্তাকালীন সময়েই প্রিমেচিউর সন্তানের জন্ম দিতে হয়েছে ইউএনও বীণাকে। তবে তিনি না চাইলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজের ব্যাক্তিগত জীবনে সদ্য ঘটে যাওয়া হৃদয়স্পর্শী ঘটনা তুলে ধরে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

স্ট্যাটাসের এক পর্যায়ে সদর ইউএনও প্রশ্ন করে বলেন, আমার এই নিষ্পাপ সন্তানটার কি অপরাধ ছিল? নাকি মা হতে চাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল, আমি জানিনা! তবে জানি একজন সব দেখেন তিনি আমার নিষ্পাপ মাসুম সন্তানের উপর এই জুলুমের বিচার করবেন। এই নিষ্ঠুর অমানবিকতার পৃথিবীতে কোন কর্তাব্যক্তিদের কাছে আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই না, শুধু আমার সৃষ্টিকর্তা কে বলবো তুমি এর বিচার করো! আর যারা আমাকে একটুও ভালোবাসেন আমার নিষ্পাপ সন্তানটার জন্য দোয়া করবেন, ও সুস্থ হয়ে গেলে কোন কষ্টের কথাই আমার মনে থাকবে না।

ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি লিখেছেন,আমি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সাধারণত ফেসবুকে খুব একটা শেয়ার করি না। তবে আজ মনে হল এখন চুপ করে থাকাটাও অন্যায়। তাই আজ আর না, আজ আমি বলবো। আমার দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চেষ্টা চিকিৎসার পরও আমরা কোন সন্তান লাভ করতে পারিনি। কিন্তু পাঁচ মাস পূর্বে আমি জানতে পারি, আমি দু’মাসের সন্তানসম্ভবা।

এ ঘটনা আমার জীবনে সৃষ্টিকর্তার অপার রহমত ছাড়া আর কিছুই নয় এ বিশ্বাস আমি প্রতিনিয়ত বুকে ধারণ করেছি। এ বিশ্বাস ও স্বপ্ন বুকে নিয়ে অনাগত সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম। পেটের আমার বাবুকে নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। নারী কর্মকর্তা হিসেবে অজুহাত, ফাঁকিবাজী এই বিষয়গুলোকে কখনই পুজি করিনি। যখন যে পদে কাজ করেছি চেষ্টা করেছি শতভাগ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে।

সন্তানসম্ভবা হয়েও এর কোন ব্যতিক্রম আমি করিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমি নারায়ণগঞ্জ ৪ ও নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের আংশিক নির্বাচন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করি। অথচ আমি সন্তানসম্ভবা হয়েছি শোনার পর থেকেই একজন বিশেষ কর্মকর্তা, যার নাম বলতেও আমার রুচি হচ্ছে না, বিভিন্ন মহলে আমাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে আমাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলীর পায়তারা করেই চলেছিল।

আমার সন্তানসম্ভবা হওয়াটাকেই সে বিভিন্ন মহলে আমার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অথচ এই সন্তান পেটে নিয়েই আমি অত্যন্ত সফলভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কতৃক এপ্রিসিয়েশনও পেয়েছি। আমার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল এপ্রিলের ২০ তারিখ, তেমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই আমি ছিলাম। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ বিকালে রেগুলার চেকাপ করতে আমি হাজবেন্ডসহ স্কয়ার হাসপাতালে আসি। চেকআপ শেষে সন্ধ্যায় আমার হাসপাতালে অপেক্ষা করছি পরবর্তী পরীক্ষার জন্য।

এমন সময় আমার একজন ব্যাচমেট ফোন করে জানায়, আমার সদাশয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ওএসডি করেছে অর্থাৎ আমাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেছে। আমার অপরাধ হলো, আমি সন্তানসম্ভবা, আর তার চেয়েও বড় কারণ হল সেই তথাকথিত ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপরের মহল কর্তৃক তদবির। খবরটা শোনার পর আমি প্রচন্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে পারিনি । প্রচন্ড মানসিকচাপে আমার ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ফলে আমার পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই আমার পেটের বাবু নড়াচড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। তাৎক্ষনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ড্ক্টর সেদিন রাতেই সিজার করে বাবু বের করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে পরদিন সকালে আমার মাত্র ৩১ সপ্তাহ বয়সি প্রিমেচিউর বেবিকে সিজার করে বের করে ফেলা হয়। এখন সে স্কয়ার হাসপাতালের ঘওঈট তে বেচে থাকার জন্য প্রানপন যুদ্ধ করে যাচ্ছে! তবে জানি একজন সব দেখেন তিনি আমার নিষ্পাপ মাসুম সন্তানের উপর এই জুলুমের বিচার করবেন। শুধু আমার সৃষ্টিকর্তা কে বলবো তুমি এর বিচার করো! আর যারা আমাকে একটুও ভালোবাসেন আমার নিষ্পাপ সন্তানটার জন্য দোয়া করবেন, ও সুস্থ হয়ে গেলে কোন কষ্টের কথাই আমার মনে থাকবে না। গত ৪ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তার স্থলে ফতুল্লা রাজস্ব সার্কেলের সাবেক এসিল্যান্ড নাহিদা বারিক নিয়োগের আদেশ দেওয়া হয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়