শিরোনাম
◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৭:০০ সকাল
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এ যেন এক রহস্যবৃত্ত

আমাদেরসময় :  সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কয়েক বছর ধরে সর্বশেষ তদন্ত সংস্থা র‌্যাবও একই ‘অগ্রগতি’র গল্প শুনিয়ে আসছে।

তবে এই অগ্রগতির শেষ কোথায়, বিচার কবে মিলবে, নিহত দম্পতির স্বজনদের পাশাপাশি সহকর্মীদের অপেক্ষার শেষ কবে হবে- কোথাও কোন উত্তর নেই। চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-টি সম্পর্কে সারাদেশের মানুষের আগ্রহের বিপরীতে কর্তৃপক্ষের নিয়ম করে গৎবাঁধা বুলি! সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি যেন নিরেট এক রহস্যবৃত্তে বন্দি হয়ে রয়েছে।

তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না থাকলেও গত ৭ বছরে ৬১টি অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে বর্তমান তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। দফায় দফায় সময় নেওয়া হয়েছে আদালতের কাছ থেকে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও নৃশংস এই হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি র‌্যাব। এরই মধ্যে ৫ দফায় বদল

করা হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এমন প্রেক্ষাপটে বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকা-ের ৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল সোমবার। অথচ হত্যাকা-ের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু ২ হাজার ৫৫৫ দিনেও ঘাতক চক্রের কোনো সদস্য ধরা পড়েনি। মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষও এখন আর যোগাযোগ করে না সাগর-রুনির পরিবারের সঙ্গে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের স্বজনদের চোখে-মুখে এখন শুধুই ক্ষোভ, হতাশা ও বিচার না পাওয়ার হাহাকার। নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান আমাদের সময়কে বলেন, তদন্তের অগ্রগতি কী হচ্ছে? র‌্যাব কেন কোনো কথা বলছে না? তারা না পারলে ডিবির মতো তদন্ত ছেড়ে দিক। সেটাও তো করে না। বিচার না পেয়ে দিন দিন আমাদের হতাশা বাড়ছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

২০১৪ সালে র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান আমাদের সময়কে জানিয়েছিলেন, তদন্তে অগ্রগতি রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। এর পর গত কয়েক বছর একই ‘অগ্রগতি’র কথা জানিয়ে আসছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

সাগর-রুনি দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহীর সরওয়ার মেঘ রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড সিক্সে পড়ছে। ছোট্ট মেঘ বড় হচ্ছে। বাবা-মায়ের হত্যাকা- নিয়ে কিছুটা বুঝতেও শুরু করেছে। এ নিয়ে মেঘ কথাও বলে তার মামা নওশের রোমানের সঙ্গে। ঘটনার পর থেকে মামার কাছেই থাকে মেঘ। বাবা-মায়ের আশ্রয় যেন এই মামাই। মা-বাবাকে হারানোর কোনো বিচার হচ্ছে না সেটি মেঘ বুঝতে পারে বলে জানালেন তার মামা নওশের নোমান।

এতদিনেও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়া প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, আলোচিত এই হত্যাকা-ের বিচার না হওয়া এদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে বেদনাদায়ক স্মৃতি। কোনো এক অদৃশ্য কারণে এই তদন্ত আলোর মুখ দেখছে না। দীর্ঘদিনে বিচার না হওয়ায় ভিকটিমদের স্বজনদের আচরণগত অসহায়ত্ব তৈরি হয় সমাজের প্রতি, বিচার বিভাগের প্রতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি। হত্যাকা-ের বিচার হওয়া মানে ওই সমাজে হত্যাকা-ের সংখ্যা সর্বনি¤œ পর্যায়ে কমিয়ে আনা। এই হত্যাকা-ের বিচার করে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।

এদিকে হত্যাকা-ের পর পরই মেঘের যারা দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন তাদের কেউই পরে তার কোনো খোঁজ নেননি বলে জানান তার মামা রোমান।

মামলার সবশেষ অবস্থা নিয়ে গতকাল র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি আমাদের সময়কে বলেন, আমরা তদন্ত করছি। আমাদের তদন্তে কোনো গাফিলতি নেই। রহস্য উদ্ঘাটনে আন্তরিক চেষ্টা রয়েছে আমাদের।

হত্যাকা-ের ঘটনায় শেরেবাংলানগর থানায় হত্যা মামলা হয়। থানাপুলিশ হয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর ন্যস্ত হয়। ৬২ দিনের মাথায় হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর পর আদালতের নির্দেশে ওই বছরের এপ্রিলে তদন্তভার ন্যস্ত হয় র‌্যাবে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সংস্থাটি। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহত দম্পতির শিশুপুত্র মেঘের সঙ্গে দফায় দফায় কথাও বলে।

র‌্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা সাগর-রুনির রক্তমাখা জামাকাপড়, বঁটি, মোজাসহ কিছু আলামত পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণাগারে পাঠানো হয়। মামলায় দেশটির দুটি প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া হয়। কিন্তু মার্কিন প্রতিবেদন পাওয়ার পরও হত্যাকা-ের রহস্য ভেদ করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা।

অন্যদিকে মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ৮ জনের কেউই এখন পর্যন্ত হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেনি। তবে তাদের মধ্যে সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল হক ও পলাশ রুদ্র পাল ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। তাদের মধ্যে প্রথম ৫ জন ২০১৩ সালের আগস্টে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ পর্যন্ত ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে ২৭ জন সাংবাদিকও রয়েছেন।

উৎসঃ আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়