শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৫:১২ সকাল
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৫:১২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফুলটাইম চাকরিজীবী, পার্টটাইম ছিনতাইকারী!

বাংলা ট্রিবিউন : দলে তারা ছয়জন। এরমধ্যে দুজন সরকারি চাকরিজীবী। একজন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী, আরেকজন ডিপিডিসির (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) মিটার রিডার। বাকি চারজনের কেউ আগে ব্যবসা করতো, কেউ মাদকে আসক্ত। একসঙ্গে ছিনতাই করে তারা। ছিনতাইয়ের সময় তারা কখনও প্রশাসনের লোক, কখনও র‌্যাব বা ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। টার্গেট করা ব্যক্তিকে আটকের অভিনয় করে হাতিয়ে নেয় সবকিছু।

এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ—ডিবি। এর মধ্যে শাহাদত হোসেন ওরফে দীপ্ত (২৮) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী। বাকি দুজনের একজন নওশাদ আহাম্মদ ওরফে কনক (৩৭) একসময় প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করতো, অপরজন পারভেজ আলী পিকি (৪৫) ইয়াবায় আসক্ত।

বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ছিনতাইয়ের নানা তথ্য বেরিয়ে আসে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি পূর্ব) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাতক আরও তিন আসামির কথা জানিয়েছে। যাদের মধ্যে একজন ডিপিডিসির মিটার রিডার। তাকেসহ বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি ও দুটি র্যা বের জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে।’

ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারী এই চক্রটি কয়েকদিন আগে মতিঝিল এলাকা থেকে এক ব্যক্তির ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। এই গ্রুপের অন্য সদস্যদের ধরতে পারলে ছিনতাইয়ের আরও ঘটনা জানা যেতে পারে।

ডিবি সূত্র জানায়, ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত ডিপিডিসির মিটার রিডারের নাম আজিজ। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ডিপিডিসির পরীবাগ কার্যালয়ে কাজ করে সে। তার সহযোগী সজল হক মতিঝিল এজিবি কলোনীর বি-৮১ হাসপাতাল জোনের ৫/সি ফ্ল্যাটে থাকে। এছাড়া এনামুল হাসান ওরফে রাজনের বাসা ৪১ নম্বর র্যাং কিন স্ট্রিটে, কেএফসি বিল্ডিংয়ের ৮ম তলায়। রাজন মতিঝিলের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাই বলে জানা গেছে। গ্রেফতার হওয়া রেলওয়ের বুকিং সহকারী শাহাদতের স্ত্রীও বুকিং সহকারী হিসেবে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত। তারা ২১২/৩, মেরাদিয়ার ভুঁইয়াপাড়ায় থাকে। পারভেজ আলীর বাসা পুরান ঢাকার ৫ নম্বর হেয়ার স্ট্রিটে, আফসার প্রোপ্রার্টিজের তিন/ডি ফ্ল্যাট। আগে ব্যবসা করলেও এখন কিছু করে না। সে ইয়াবায় আসক্ত। নওশাদের বাসা ২৭৯/ক, দক্ষিণ গোড়ানে। একসময় প্রিন্টিং ব্যবসা করলেও বছর খানেক ধরে সে ছিনতাই করে বেড়ায়।

যেভাবে ১৫ লাখ টাকা ছিনতাই :

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ১৬ জানুয়ারি মতিঝিলের দিলকুশা এলাকা ডাচবাংলা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়া এক ব্যক্তির পিছু নিয়ে ১৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এতে তারা ছয়জন অংশ নেয়।

গ্রেফতার হওয়া রেলওয়ের বুকিং সহকারী শাহাদত হোসেন দীপ্ত জানায়, রাজন, আজিজ, কনক ও সজল তার পূর্ব পরিচিত। ওই দিন সকালের শিফটে কমলাপুর স্টেশনে দায়িত্ব শেষ করে বের হওয়ার পর রাজন ও সজল তাকে মতিঝিলে যেতে বলে। তারা সবাই মতিঝিলের দিলকুশার ডাচবাংলা ব্যাংকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। রাজন ব্যাংকের ভেতরে থেকে বের হয়ে এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিতে দেখিয়ে দেয়। পারভেজ ওই ব্যক্তিকে অনুসরণ করে। পরে আজিজ, সজল ও কনককে দেখিয়ে দেয় সে। ওই ব্যক্তি বাসে উঠলে আজিজ তার পিছু পিছু ওই বাসে ওঠে। বাকিরা দুটি মোটরবাইকে করে বাসের পেছনে যেতে থাকে। টাকার ব্যাগ নেওয়া ওই ব্যক্তি যাত্রাবাড়ীতে নামার পর তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে ঘিরে ধরে। পরে রাজন ও কনক টাকার ব্যাগ নিয়ে একটি মোটরবাইকে ওঠে। শাহাদত ও আজিজ ওই ব্যক্তিকে মোটরবাইকের মাঝখানে বসিয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়ার অভিনয় করতে থাকে।

শাহাদত হোসেন দীপ্ত জানান, মোটরবাইক চলতে শুরু করতেই মাঝখানে থাকা ওই ব্যক্তি হঠাৎ তাকে ধাক্কা দিয়ে পেছনে ফেলে দেয়। এসময় মোটরসাইকেলটি পড়ে গেলে ওই ব্যক্তি চিৎকার শুরু করে। আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে প্রথমে আজিজ দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে শাহাদত নিজেও দৌড়ে একটি ভবনের সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার দিকে ওই বাসা থেকে বের হয়ে বাসায় চলে যায়। পরে রাতে অন্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে দুই লাখ ১০ হাজার টাকার ভাগ নেয়। পরদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বগুড়া ও দিনাজপুরের হিলিতে গিয়ে কয়েকদিন আত্মগোপনে থেকে আবার ঢাকায় আসে।

গ্রেফতার হওয়া নওশাদ আহাম্মদ কনক জানায়, আজিজ ও শাহাদত যাত্রাবাড়ী এলাকায় যে মোটরবাইকটি ফেলে এসেছিল, সেটি তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। সেটি ফেলে আসার কারণে ধরা পড়ার ভয়ে সে ওই দিনই সন্ধ্যায় রাজনের পরামর্শে খিলগাঁও থানায় গিয়ে মোটরসাইকেলটি হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে জিডি করে। পরে রাতে তারা আবার পুরান ঢাকায় পারভেজ আলীর বাসায় গিয়ে ছিনতাইয়ের ২ লাখ ১০ টাকার ভাগ নেয়।

নওশাদ আহাম্মদ কনক জানায়, তার নিজের মোটরসাইকেলটি ফেলে আসার কারণে বাকিরা তাকে ৪০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা দেয়। পরে ওই টাকা নিয়ে সেও কয়েকদিন আত্মগোপনে থেকে আবার সবার সঙ্গে মিলিত হয়।
গ্রেফতার হওয়া পারভেজ আলী পিকি জানায়, একসময় নার্সারির কাজে ব্যবহৃত পটারির ব্যবসা করলেও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে সে ব্যবসা ছেড়ে দেয়। পুরান ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকে। স্ত্রী টিউশানির উপার্জনে চলে। মাঝে-মধ্যে রাজনদের সঙ্গে ছিনতাই করে।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ছিনতাইয়ের এই ঘটনা জানার পর তারা ভুক্তভোগী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। ছিনতাইয়ের পর ওই ব্যক্তি থানায় কোনও মামলা করেছিলেন কিনা, তাও জানার চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে কনকের সেই মোটরসাইকেলটি কোথায় আছে এবং থানায় করা জিডির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে অন্যান্য ছিনতাইয়ের ঘটনাও জানার চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়