হ্যাপি আক্তার : মানুষের শিরা, উপশিরায় রক্ত প্রবাহে কোনো বিপত্তি ঘটলে সহজ ভাষায় তাকে বলে রক্তনালীর ব্লক । এর সঠিক চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর সারা দেশে অঙ্গহানি হয়, ১০ থেকে ১২ লাখ লোকের। এতো মানুষের এমন পঙ্গুত্বের পরও দেশে মাত্র একটি সরকারি হাসপাতালে ব্যবস্থা আছে এই রোগের জরুরি চিকিৎসার। আর সারাদেশে ভাসকুলার সার্জনের সংখ্যা সব মিলিয়ে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন। চ্যানেল ২৪।
মাদারীপুর থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৬০ বছর বয়সী লিকু চোকদার। কোনো দুর্ঘটনায় তার পা কাটা না পড়লেও ৬ বছর আগে যে কারণে তার বাম-পা কাটা পড়েছিল, ঠিক একই রোগে আক্রান্ত হয়ে এবার ডান পায়ের চিকিৎসা নিতে এখানে তিনি।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভাসকুলার চিকিৎসক ডা. আবুল হাসান মোহাম্মদ বাশার বলেছেন, হার্টে ব্লক যে কারণে হয় উচ্চ রক্তচাপ, ধুমপান, ডায়াবেটিক এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, এই চারটি কারণেই হার্টে ব্লক হয়। সেটা হার্টে বা রক্তে হতে পারে। হার্টের ব্লক যাতে না হয়ে যেন অঙ্গহানি না হয় সে জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে।
লিকু চোকদারের মতো রক্তনালীর এমন সমস্যায় আক্রান্ত অনেক রোগীই এখন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগে। তাদের সবার অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকম। দীর্ঘ দিন নানা চিকিৎসকের কাছে ঘুরে এখানে এসেছেন তারা। ।
রোগীরা বলছেন, আমাদেরও গাফিলতি ছিলো এবং যাদের কাছে চিকিৎসা নিব সেই ডাক্তারও সম্পূর্ণভাবে বলেনি কিভাবে কি করবো।
যারা একটু আগে-ভাগে আসতে পেরেছেন, রিং বা বেলুনের মাধ্যমে তাদের রক্তনালীর প্রতিবন্ধকতা দূর করা হচ্ছে। কিন্তু যাদের হাত-পায়ে পচন ধরেছে, তাদের তা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০-১২ লাখ মানুষ পায়ে রক্ত ব্লক হয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। অনেক সময় কেটে ফেলতে হয়। যার কারণে সুস্থ মানুষটি সমাজের বোঝা হয়ে যাচ্ছে।
দেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কতো? এর সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব না থাকলেও স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নাল বলছে, ৪০ এর বেশি বয়সী মানুষের শতকরা ১০ জন এই রোগে আক্রান্ত।
কিন্তু, দেশে রোগটির চিকিৎসা করতে জানেন মাত্র ২৫-৩০ জন। সরকারি হাসপাতালগুলো মধ্যে এই রোগের জন্য, ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ রয়েছে শুধু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে।
প্রতি বছর সারা দেশে রক্ত ব্লকের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। রক্তব্লকের জন্য ভুক্তভোগী রোগী যারা আছেন এবং চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতার পাশাপাশি অন্তত দেশের ৮টি বিভাগীয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ চালু করা দরকার। সম্পাদনা : জামাল