ডেস্ক রিপোর্ট : মাটিতে শীতলপাটি। ছাদ লাগোয়া রঙিন শামিয়ানায় কাগজের ফুল। নিচে নকশাখচিত বাঁশের বেড়ায় কচিকাঁচার তুলতুলে হাতের আঁকিবুঁকি। চার দেয়ালের এমন ঘরে খেলায় মত্ত রোহিঙ্গা শিশুর দল। শরণার্থী শিশুদের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত এসব 'হিউম্যানিটারিয়ান প্লে-ল্যাবের (এইচপিএল) কথা উঠে এসেছে ব্র্যাক আয়োজিত 'প্লে সামিট ২০১৯'-এ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর অদূরে সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সমাপনী দিনে 'এইচপিএল' মডেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। সহিংসতা থেকে সৃষ্ট মানসিক ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে খেলাধুলা- গবেষকদের এমন ধারণার ওপর ভিত্তি করে এইচপিএল মডেলটি তৈরি করেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদের মানসিক ক্ষত সারিয়ে তুলতে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।
জায়গা বা অর্থ সংকটের মধ্যেও শিশুদের খেলার ব্যবস্থা করার উপায় হিসেবে কয়েকটি প্রোটোটাইপ নকশা করেছে ব্র্যাক আইইডি। গতকাল এ রকমই কয়েকটি প্রোটোটাইপ প্রদর্শিত হয় 'প্লে সামিট ২০১৯' অনুষ্ঠানে।
হিউম্যানিটারিয়ান প্লে-ল্যাব মডেলটি মূলত ছয় বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের জন্য উপযোগী। বিশ্ববিখ্যাত লেগো ফাউন্ডেশনের তৈরি প্লে-ল্যাব মডেলের আদলে এর নকশা করা হয়েছে। প্লে-ল্যাবগুলো তৈরিতে ব্র্যাকের সঙ্গে কাজ করেছে রোহিঙ্গা শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং নারীরা। এতে করে প্লে-ল্যাবগুলোতে রোহিঙ্গাদের নিজস্ব সংস্কৃতির আবহ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্র্যাকের ২৫০টি প্লে-ল্যাবে অন্তত ৪০ হাজার শিশু শিক্ষা গ্রহণ করেছে। লেগো ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে 'খেলায় খেলায় শিক্ষা' ধারণাটি প্রচারে কাজ করছে বিআইইডি। রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৩০০টি শিক্ষাকেন্দ্রে প্লে-ল্যাব মডেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা, যাদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু। এই শিশুর অনেকেই পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। তারা এই বয়সেই এত সহিংসতা ও রক্তপাতের ঘটনা দেখেছে যা বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরও ধারণার অতীত। এ প্রসঙ্গে সম্মেলনে ব্র্যাক আইইডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম বলেন, এই শিশুরা তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে এখানে এসেছে। ক্যাম্পের মধ্যে তাদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছি, যেখানে রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও পারিপার্শিকতার ছোঁয়া। এতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, যা তাদের নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে এবং শৈশবকে নতুনভাবে উপভোগ করতে সাহায্য করেছে।
শিশুদের বেড়ে ওঠায় খেলাধুলার ভূমিকা এবং কীভাবে এই মডেলটি স্বল্প খরচে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় মানবিক সংকট পরিস্থিতিতে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয় সম্মেলনে। প্লে-ল্যাব নিয়ে একাধিক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া নিজস্ব পরিবেশনা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্লাউনস উইদাউট বর্ডারসের সদস্যরা। সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থী শিশুদের নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ তালুকদার এবং লেগো ফাউন্ডেশনের 'ইনিশিয়েটিভ লিড' লেসলি প্যাট্রিশিয়া হোলস্ট।
আপনার মতামত লিখুন :