শিরোনাম
◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:০৬ সকাল
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিনা সুতার মালা

আফরোজা সোমা : বাড়ির পাশে আশৈশব একটি সজনে গাছ দেখে দেখে বড় হয়েছি। মায়াবী সজনের ফুল। সবুজ পাতার আড়াল ছাপিয়ে সাদাটে ফুলের মায়া বড় মোহনীয়।
ঢাকায় বাস আরম্ভ হবার পর নিবিড়ভাবে আর সজনে গাছ বিশেষ দেখা হয়নি। মাঝেমধ্যে বাড়ি গেলে বা চকিতে চলতি পথে কোথাও হয়তো বা চোখে পড়েছে।
কিন্তু গত বছর দেড়েক হলো আমার চলার পথ ভরে আছে সজনে ফুলের মায়ায়। কর্মস্থল কুড়িলে স্থানান্তরিত হওয়ায় অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় রোজ। যেহেতু বাইকই আমার বাহন তাই চারপাশটাও ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বেশ উপভোগ করার সুযোগ ঘটে।
গত কিছুদিন নয়ন ভরে আছে সজনে ফুলের মায়ায়। পথের দু’ধারে খানিক পর পরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকছে সজনে গাছ। গাছভরা মায়া। কিন্তু আজকাল সজনে ফুল দেখলেই আমার শাহেদ ভাইয়ের মায়ের কথা মনে পড়ে। কিছুদিন আগে কফি খেতে খেতে হাজার গল্পের এক গল্প হিসেবে শাহেদ ভাই তার মায়ের প্রস্থানের দিনের কথা বলছিলেন।
শাহেদ ভাইয়ের মা ফুলে ভরা সজনে গাছ খুব ভালোবাসতেন। উনি যেদিন দেহান্তরিত হলেন সেদিন তাকে গোরে নামানোর সময় মাতৃবিয়োগের বেদনার মধ্যেও শাহেদ ভাইয়ের হৃদয় চকিতে পুলকিত হয়ে উঠেছিলো। কারণ তার মায়ের ঠিক কবরের পাশেই একটা সবুজ সজনে গাছ মায়াবী সাদাটে ফুলে ঐশ্বর্যম-িত হয়ে ছড়াচ্ছিলো অপার্থিব সৌন্দর্য।
ফুলে ভরা সজনে গাছে দেখে শাহেদ ভাইয়ের মনে হয়েছিলো বাহ! মায়ের কবরের পাশেই মায়ের ভালোবাসার সজনে ফুল। মা দেখলে খুব খুশি হতো। গল্প শুনতে শুনতে আমার মনে হয়েছিলো, এটাই বুঝি ছিলো সজনে ফুলে মুগ্ধ এক সন্তানের প্রতি মা প্রকৃতির ফেয়ারওয়েল।
কিন্তু ফেয়ারওয়েল বা বিদায় উপহারের মধ্যেই ব্যাপারটা শেষ হয়নি। গত কিছুদিন ধরে সজনে গাছ দেখলেই আমার শাহেদ ভাইয়ের মায়ের কথা মনে আসে।
কবর প্রসঙ্গেই মনে আসছে আরেকজনের কথা। আমার বাবা দেহান্তরিত হবার পর আর্তচিত্তে একদিন আমি লিখেছিলাম, ‘আগে বাবার কাছে যেতাম। এখন তার কবরের কাছে যাই।’
আমার এই লেখার নিচে কামাল ভাই মন্তব্যের ঘরে লিখেছিলেন, তার বাবার কবরটাও নেই। নদী এসে কবরটাও ভেঙে নিয়ে গেছে একদিন। ফলে বাবার কবরের কাছে বসে প্রাণ জুড়ানোর সুযোগটাও নেই ব্যথিত সন্তানের।
সেই থেকে যতোবার আমি আব্বুর কবরের কাছে যাই, কামাল ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। বাবার কবরের পাশে আশ্রয় গ্রহণের আশীর্বাদও সকলের জোটে না সংসারে।
আজ সকালে আসতে পথে রোজকার মতোই সজনে ফুলের মায়ায় যখন আমি মাখামাখি, শাহেদ ভাইয়ের মায়ের কথা মনে গুঞ্জিরত হতে থাকলো। কবরের পাশে ফুলেল সজনে গাছের দৃশ্যটা মনে আসা মাত্রই আমার বাবার কবরের কথা মনে এলো। বাবার কবরে দোলনচাপা গাছ। ক’দিন আগে দেখে এলাম, ফুল ফোটা শেষ হয়ে গাছগুলো বুড়ো হয়ে গেছে।
ফুল দেয়া শেষ হলেই বাড়িতে থাকা সব দোলনচাপার গাছ বাবা কেটে ফেলতো। এই নিয়ে আম্মা মুখ-ঝামটা দিলে বাবা বলতো, বোঝো না তো কিছু। এই গাছ বারবার ফুল দেয় না। এইগুলার সব কলি ফুটে গেছে। যেইগুলার ফুল দেয়া শেষ সেইগুলো না কাটলে নতুন গাছ বাড়বে না। নতুন গাছে পুষ্টি না গেলে ফুল আইবো কেমনে।
বাবার কবরের ওপরে থাকা ফুল দিয়ে মরে যাওয়া দোলনচাপা গাছের ঝোপটাকে পরিষ্কার করতে বলেছিলাম আমার ছোট বোনকে। ঝাঁকড়া হয়ে থাকা এবড়ো-থেবড়ো গাছ বাবা পছন্দ করতো না। গাছেদের বাবা খুব যতœ করে রাখতো।
এসব সাত-পাঁচ যখন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তখনই কামাল ভাইয়ের কথা মনে এলো। নদী এসে তার বাবার কবরটাও মুছে নিয়ে গেলো।
কামাল ভাই, বাবার কবরের কোনো রিপ্লেসমেন্ট হয় না। যদি হতো, আমি আপনাকে আমার বাবার কবরের কাছে আসতে বলতাম।
পৃথিবী একটা বিনা সুতার মালা। শাহেদ ভাইয়ের মা বা কামাল ভাইয়ের বাবাকে না দেখেও আমরা সবাই একই মালার পুঁতি হয়ে উঠেছি। আমাদের বিনা সুতার মালায় বেঁধে রেখেছে সজনে ফুলের মায়া, আমাদের বেঁধে রেখেছে কবরের বিহ্বলতা। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়