শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৭:১৭ সকাল
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৭:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধারে চলছে ব্যাংক

আমাদের সময় : দেশের ব্যাংকিং খাত অর্থসংকটে ভুগছে। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোতে নেই পর্যাপ্ত নগদ টাকা; আমদানিকারকদের জোগান দিতে নেই পর্যাপ্ত ডলার। প্রয়োজন মেটাতে তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ ধার নিতে হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এর বাইরে প্রাত্যহিক চাহিদা মেটাতে আন্তঃব্যাংকিং মুদ্রাবাজার বা কলমানি মার্কেট থেকেও অর্থ ধার করছে অনেক ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ক্রমেই বাড়ছে কলমানি মার্কেটে সুদের হার। এই যখন অবস্থা, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছেÑ ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। কিছু ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার মতো সক্ষমতা শুধু নেই।

নগদ প্রয়োজন মেটাতে তারল্য সহায়তা বাবদ চলতি অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে রেপোর মাধ্যমে ১৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে কিনেছে ১১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থের ডলার। এ ছাড়া প্রতিদিনই কলমানি মার্কেট থেকে গড়ে ৫-৭ হাজার কোটি টাকা ধার নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তারল্য সংকটের জেরে কলমানি মার্কেটে সুদহার দেড় শতাংশ থেকে বেড়ে এখন সাড়ে ৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এএসএম বুলবুল অবশ্য এসব ঋণপ্রবাহকে নেতিবাচক ভাবছেন না। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমানতের সুদহার বেশি হলে অনেক সময় কলমানি ও রেপো বাবদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে তা নিয়মিত ফেরতও দেওয়া হচ্ছে। এএসএম বুলবুল আরও বলেন, স্বল্প সুদে অর্থ নিয়ে ব্যবহার করতে পারার বিষয়টি বরং ফান্ড ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা।

একাধিক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নজিরবিহীন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এর জেরে আমানতকারীরা তাদের জমা করা অর্থ তুলতে গেলে সেই অর্থও দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, এমন নজিরও রয়েছে অনেক। এতে করে সাধারণ গ্রাহকের অনেকের মনেই নেতিবাচক ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে খোদ ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে। এর প্রভাবও পড়েছে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহে। কোনো ব্যাংকেরই আমানত আশানুরূপ নয়। গত নভেম্বরের হিসাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর বিপরীতে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ, যা তারল্য সংকট তৈরি করছে।

২০১৭ সালে আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করায় নগদ টাকার সংকটে পড়তে হয় দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংককে। এর ঢেউ এসে আঘাত করে পরের অর্থবছরেও। বর্তমানে নিজ প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও নেই অনেক ব্যাংকের। এমনকি দৈনন্দিন নগদ টাকার চাহিদা পূরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখার মতো অর্থও নেই। ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সিআরআর ও এসএলআরে টাকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই জরিমানা এড়াতে ব্যাংকগুলো প্রথমে কলমানি মার্কেট থেকে অর্থাৎ অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়। এতেও প্রয়োজন না মিটলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে রেপোর মাধ্যমে অর্থ নেওয়া হয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) জুলাই থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রেপোর মাধ্যমে ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা নিয়েছে ব্যাংকগুলো। টাকা ধার নেওয়ার এ তালিকায় আছেÑ এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল, অগ্রণী, সিটি, ওয়ান, ইউনিয়ন, এনসিসি, স্ট্যান্ডার্ড, এনআরবি ও উত্তরা ব্যাংক প্রভৃতি।

উল্লেখ্য, সুদহার কমিয়ে নয়-ছয় করার পূর্বশর্ত হিসেবে গত বছর রেপোরেট দশমিক ৭৫ শতাংশ কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয় ব্যাংকের মালিকদের চাপে। এখন ৬ শতাংশ সুদে রেপোর মাধ্যমে অর্থ নিতে পারছে ব্যাংকগুলো।
এদিকে ব্যাংকগুলো নগদ অর্থের সংকটে ভুগলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা মানতে নারাজ। তাদের ভাষ্যÑ তারল্য সংকট তো নেই-ই বরং রয়েছে অতিরিক্ত তারল্য। অতিরিক্ত হারে ঋণ বিতরণ করায় নতুন করে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হারিয়েছে ১১টি ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) ৭৭ শতাংশ, যেখানে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে সর্বোচ্চ সীমা।
সম্প্রতি মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকিং খাতে ৭৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা অলস তারল্য রয়েছে।

অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানির বিপরীতে দায় মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে পণ্য আমদানি অনেক কমে যায়। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ব্যয় প্রায় ২৭ শতাংশ কমেছে। কিন্তু এর পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার ক্রয় অব্যাহত রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। জুলাই ২০১৮ থেকে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ১৩৩ কোটি ডলার কিনেছে। অতিরিক্ত ডলার ক্রয়ের কারণে নগদ টাকা বা তারল্য ফুরিয়ে গেছে ব্যাংকগুলোর।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের চাপ কিছুটা আছে। মার্চের মধ্যে এডিআর সমন্বয় করতে হবে। তবে ব্যাংকগুলো অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি যোগ করেন, এর ফলে আমানতের সুদহার কিছুটা হলেও বাড়ছে। অন্যদিকে দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এসব প্রকল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতেও প্রচুর ডলার গুনতে হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়