অজয় দাশগুপ্ত, অস্ট্রেলিয়া থেকে : তুখোড় বক্তা ছিলেন। রসিক মানুষও বটে। সাধারণত রাজনীতিবিদেরা হন গুরুগম্ভীর। তিনি তেমন কেউ ছিলেন না। যৌবনের শুরুতে আমরা ইন্টারনেট দেখিনি। ছিলো না এতো মিডিয়া। সরকারি চাপে চ্যাপ্টা সরকারি টেলিভিশন দেখলে বোঝা যেতো না দেশ কোন পথে? এখনো বোঝা যায় না। তবে তখন কোনো কোনো নেতাদের কথা শুনলে আঁচ করা যেতো কি হতে যাচ্ছে। তিনি ছিলেন তেমন নেতা। উপরি পাওনা থাকতো রসবোধ। কী অসাধারণ তখনকার রাজনীতি। তিনি একবার মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে ধরলেন। তাকে নিয়ে ভাষণে বললেন, আমার প্রিয় এই বড় ভাই নেতা আজ ফ্রি সাইজ মোজা। এমনকি পোলার বয়সী জেনারেল জিয়ার পায়েও ফিট। পরের সপ্তায় ছিলো যাদু মিয়াদের জনসভা। সে সভায় যাদু মিয়া জবাব দিলেন, তিনি বললেন আমি কথাটা শুনেছি। এটা নিয়ে ভাবনার কিছু নাই। ওকে আমার গিন্নি ছোটভাই ডাকে। পোলাপান ডাকে মামা। দুলাভাইকে এমন ঠাট্টা করতেই পারে সে। এ রাজনীতি এখন ভাবাও যায় না। তার সাথে আমার যখন সিডনিতে দেখা হয়েছিল শুরুতেই দীপাকে বললেন, এই তুমি এর লগে এতো বছর থাকো কেমনে? এতো বড় খটমটে লোক। দাদার মুখের দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, কন কি দাদা, বৌদির কাছে ওতো শিশু। শুনে তার কি সহজ সরল হাসি। অন্য কেউ হলে দেশে গেলে গুম হলেও হতে পারতাম। সংবিধান ছিলো মুখস্থ প্রায়।
আইন নিয়ম বিধানের ধারা বলতেন চোখ বুজে। সরকারি বিরোধী সব দলের নেতারা জানতেন তিনি দাঁড়ালেই নতুন কিছু শুনবেন। কিছু রসিকতা কিছু নতুন বিষয় যোগ হবে। এ ধরনের সংসদ সদস্য বা পার্লামেন্টারিয়ান এখন নেই বললেই চলে। চাঁদেরও কলংক আছে। শেষ বয়সে রেলমন্ত্রী হবার পর বস্তা ভর্তি টাকা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়া তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো কিছু মিডিয়া। তার ওপর সারাজীবনের পুষে রাখা রাগ, অপমান সাম্প্রদায়িকতা বেরিয়ে আসতে শুরু করলো বমির মতো। এ সুযোগে তার দলের লোকরাও নেমে গেলো চরিত্র হননে। ঘটনা সত্য না মিথ্যা তার জবাব দেয়ার আগেই তিনি চলে গেলেন ওপারে। যা সকল জবাবদিহিতার বাইরে। মনে রাখতে হবে কোনো ঘেউ ঘেউ বিজয়যাত্রা থামাতে পারে না। তার আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তাকে এখন বাঁচিয়ে রেখেছেন তার পতœী। আজ নন্দিত রাজনীতিবিদ, তুখোড় সংসদ সদস্য, বক্তা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়াণ দিবস। রাজনীতি তাকে মনে রাখুক না রাখুক, দেশ রাখবে।
লেখক : বিশ^বিদ্যালয় পরীক্ষক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :