শিরোনাম
◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৫৯ রাত
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:৫৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের অভিন্ন শাসক চরিত্র

ভজন সরকার : অত্যন্ত রূঢ় প্রশ্নটি করেছিলেন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, ‘বাঙালি : একটি রুগ্ন জনগোষ্ঠী?’ প্রবন্ধে। যাদের ইচ্ছে প্রবন্ধটি পড়ে নিতে পারেন ‘নরকে অনন্ত ঋতু’ গ্রন্থে আছে । বিখ্যাত ও নন্দিত-নিন্দিত লেখক নিরোদ সি চৌধুরীর পরে হুমায়ুন আজাদ বাঙালির চরিত্রকে এমন নিখুঁত চিত্রায়ণ করেছিলেন। বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গেই  অধিকাংশ বাঙালির বসবাস, জীবনযাপন এবং রাজনীতি। হুমায়ুন আজাদ বাঙালির বসবাস ও জীবনযাপনের চালচিত্র নিয়ে বলেছেন কিন্তু রাজনীতি নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। কারণ, হুমায়ুন আজাদের ভাষায় ‘ভ-’ বাঙালির রাজনীতিতে ভ-ামো ছাড়া কিছু নেই। বাঙালি গণতন্ত্রের কথা বলে বলে মুখে ফেনা তোলে কিন্তু গণতন্ত্রচর্চা করে না কখনোই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলতে বলতে কথার ফোয়ারা তোলে কিন্তু মানুষের ভোটাধিকার হরণে বাঙালির কাছে পৃথিবীর অন্য সকল জাতি নস্যি।

বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যতো কম কথা বলা যায় ততোই ভালো। ‘ভোটচুরি’ বলে এখন আর কোনো শব্দ অবশিষ্ট নেই, শব্দটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে ‘ভোটডাকাতি’ দিয়ে। অথচ এক সময় বাঙালিই নাকি গণতন্ত্র আর ভোটাধিকারের জন্য নদী-নদী সাগর-সাগর রক্ত দিয়েছে। বাংলাদেশে অনেকে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে ভারতের গণতন্ত্র আর নির্বাচনী ব্যবস্থার কথা বলে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। অথচ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ভোট চুরিতে যে পরিমানে পারদর্শী বাংলাদেশের বাঙালিরা সে তুলনায় নিতান্ত শিশু।

পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী কমরেডরা সুদীর্ঘ তিন দশক রাজ্যপাট চালিয়েছেন। এ তিন দশকে  নীতিবাগীশ  কমরেডগণ ‘ভোটচুরি’-কে এমন এক নিখুঁত শিল্পের পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেছিলেন যে, পেশাদার চোরেরাও লজ্জা পেয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপক জনরোষে শেষতক সেটাও রক্ষা করা যায়নি মারাত্মক কিছু ভুলে এবং নিজেদের  আত্মবিশ্বাসের জন্য।

প্রায় এক দশক হতে চললো গণতন্ত্রের আরেক লড়াকু তৃণমূল নেত্রী এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ক্ষমতায়। তিনিও ক্রমে ক্রমে ‘ভোটচুরি’ কে ‘ভোটডাকাতি’র পর্যায়ে নিয়ে চলেছেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে গেছে যে, ছিটেফোঁটা বিরোধিতাও সেখানে সহ্য করেন না সেই নেত্রীর দল। তাই তো স্থানীয় নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি স্থানে বিরোধীদলের প্রার্থীই পাওয়া যায় না। তাই বলেছিলাম, বাংলাদেশ এখনো পশ্চিমবঙ্গের কাছে শিশু! এ তো গেলো গণতন্ত্রের কথা। দুর্নীতি আর চিটিংবাজিতে বাঙালি অপ্রতিরোধ্য- সেটা হোক বাংলাদেশ কিংবা পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশে যেমন ব্যাংকের পর ব্যাংক লুট করে নেয়া যায়, পশ্চিমবঙ্গেও তেমনি সারদা-নারদা চিটিংবাজিতে হাজার হাজার কোটি লোপাট করা যায়।

বাংলাদেশে দুদক নামক এক সংস্থা আছে, তারা মাঝেমধ্যে লোক দেখানো কাজকর্ম করে কিন্ত সে তুলনায় ভারতে একটি বাড়তি সুবিধে আছে, রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার আছে। আর রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার যদি দুই দলের হয় তবে সেখানে পাওয়া যায় আরও কিছু সুবিধে। কারণ, কেন্দ্রীয় সংস্থা তখন রাজ্য সংস্থাকে কিছুটা হলেও নজরদারিতে রাখে।  এখন পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য তেমনি এক মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। সারদা চিটফান্ড লোপাটে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে নীচ পর্যায়ের অনেকেরই জড়িত থাকার প্রমাণ নাকি আছে কেন্দ্র সংস্থার কাছে।

বাংলাদেশে যেমন পুলিশসহ সরকারের বাহিনীকে সরকারি দল প্রায় সকল অপকর্মে ব্যবহার করে থাকে, পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে শাসক দল ব্যবহার করেছেÑ এ অভিযোগে পুলিশ প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিলো কেন্দ্রের তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ প্রধান এই ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। অথচ তিনি নাকি কেন্দ্রের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসেছিলেন বছরের পর বছর। তাই সিবিআই হানা দিতে গিয়েছিলো পুলিশ প্রধানের বাড়িতে। কিন্তু সিবিআই সদস্যদের উল্টো   গ্রেফতার করে বসেছে রাজ্যের পুলিশ বাহিনী। কেন্দ্রও পাল্টা হুমকি দিয়েছে রাজ্য সরকারকে হটিয়ে কেন্দ্রের শাসন জারির।

পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী পুলিশ প্রধানকে রক্ষা করতে ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় ধর্ণায় বসে পড়েছেন নজিরবিহীনভাবে। জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টেরও নাকি রায় আছে এই পুলিশ প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদের। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সংবিধান ও কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন কেন? সামান্য এক পুলিশ প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাঁচানোর এ চেষ্টা কেন? এ প্রশ্ন অনেকেরই।

উত্তর খুব সহজ। নিরোদ সি চৌধুরী আর হুমায়ুন আজাদ সে উত্তর দিয়ে গেছেন অনেক আগেই। বাঙালি নীতিকথা বলেন সব সময় কিন্তু কাজে করে ঠিক উল্টো। কে জানে এই পুলিশ প্রধানকে দিয়েই  হয়তো শাসক দল দুর্নীতি আর চিটিংবাজি করেছে। হয়তো  ‘ভোটডাকাতি’সহ রাজ্যকে বিরোধীদল শূন্য করতেও পুলিশ বাহিনীর মুখ্য ভূমিকা আছে; আর তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই পুলিশ প্রধানই! কিছুই অবিশ্বাস্য নয়। তার কারণ বলে গেছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদই, ‘মানুষকে অবিশ্বাস করা পাপ কিন্তু বাঙালিকে বিশ্বাস করা নির্বুদ্ধিতা’। সত্যিই কি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সর্বত্রই প্রমাণিত হবে ‘বাঙালি : একটি রুগ্ন জনগোষ্ঠী?’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়