মাসুক হেলাল : ১৯৭৮ সাল। আমি সদ্য ঢাকায় এসেছি। রাতে খেলাঘর অফিসে, টেবিলের ওপর ঘুমাই। কাউকে চিনি না, আমাদের কুমিল্লার ইত্তেফাকের আর্টিস্ট মুন্নাভাই, এটা শুধু জানি। ইত্তেফাকে গেলাম মুন্না ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। মুন্না ভাই, কথা বলছিলেন একজন স্মার্ট তরুণের সঙ্গে, তিনি ইমদাদুল হক মিলন। মুন্না ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন। মাঝে মাঝে ইত্তেফাকে গেলে ‘রোববার’ অফিসে তার সঙ্গে দেখা করি। রোববার পত্রিকা তখন বেরুবে, কাজকর্ম হচ্ছিলো। রফিক আজাদ, নাদিরা মজুমদার, আবেদীন কাদের, অসীম সাহা, কাজী হাসান হাবীব কাজ করছেন। মিলন ভাই বললেন, যাবে আমার সাথে সাগরের ‘খাবার দাবারে’, আফজালের সাথে দেখা হতে পারে। ঢাকা স্টেডিয়ামের সামনে ‘পিঠাঘর খাবার দাবার’ মিলন ভাই নিয়ে আসেন। এসে দেখি ফরিদুর রেজা সাগর, সাগর ভাই সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। দোকানে শাইখ সিরাজ তদারকি করছেন। মিলন ভাই বললেন, সাগর ওর নাম মাসুক, কুমিল্লা থেকে এসেছে চারুকলায় ভর্তি হবে। সাগর ভাই বললেন, আফজাল আসবে, এর মধ্যে আফজাল হোসেন রিকশা থেকে নামলেন। তাদের মধ্যে কথাবার্তা হলো, তার সাথে আমাকে মিলন ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে আফজাল হোসেন বললেন, তোমার কোনো কাজ আছে, না থাকলে চলো। রিকশায় যেতে যেতে টুকটাক কথাবার্তা, কোথায় থাকি এসব। মতিঝিল অবজারভার ভবন ‘কিশোর বাংলা’ অফিস, নিয়ে গেলেন আফজাল হোসেন। সাইফুল আলম (বর্তমানে যুগান্তরের সম্পাদক) কতোগুলো গল্প কবিতার ছবি আঁকতে দিলেন আফজাল হোসেনকে। তিনি ছোট একটা টেবিলে বসে আঁকতে শুরু করলেন। আমি বিস্ময়ে দেখছি। ট্রেসিং পেপারে চাইনিজ ইঙ্ক দিয়ে ইলাস্ট্রেশান করছেন। দু’ঘণ্টার মতো কাজ করেন। অফিস থেকে বেরিয়ে ফকিরাপুল বাদশা হোটেলে রুটি কাবাব খাওয়ালেন। আবার আমাকে রিকশায় নিয়ে মগবাজার আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের সামনে থামলেন। রাস্তায় কোনো কথা হলো না। সেখানে চলছিলো ঢাকা থিয়েটারের রিহার্সেল। সেলিম আল দীনের নাটক ‘শুকুন্তলা’। তখনই দেখি, সুবর্ণা, ফরিদী, পীযুষ, আসাদ, সেলিম আল দীন ও শিমুল ইউসুফকে। লম্বা একটা লোককে আফজাল হোসেন বললেন, ‘বাচ্চু ভাই ওর নাম মাসুক ও কুমিল্লা থেকে এসেছে চারুকলায় ভর্তি হতে। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জানতে চাইলেন, একজনকে ডেকে বললেন, ফারুক , ওর ভর্তির ব্যাপারটা তুমি দেখবে। এখান থেকে সন্ধ্যায় নিয়ে গেলেন বিটিভিতে। নাটকের রেকর্ডিং। হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে, নাটক ‘নিবার্সন’ নাট্যরূপ দিয়েছেন আফজাল হোসেন। আনিস চরিত্রটা করছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। ফরিদী তখন টিভিতে নতুন, তাকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন আফজাল হোসেন। চরিত্রটা একটা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধোর। নায়িকা শিমুল ইউসুফ। প্রযোজক ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। এ ছিলো আমার প্রথম দেখা আফজাল হোসেন, আমার আফজাল ভাই। তুমি ভালো থাকবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :