শাহীন চৌধুরী: দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ায় পর্যায়ক্রমে অতি পুরনো, পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি বছর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এসব কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হবে। পুরোনো বিদ্যুৎকন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়া কেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে এক পর্যালোচনা সভায় সম্প্রতি একটি পরিকল্পনাপত্র তৈরী করা হয়। ওই পরিকল্পনার খসড়া এরই মধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। খসড়ায় এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ও ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে যাওয়া কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই গ্যাসভিত্তিক। এগুলোর স্থানে কয়লাভিত্তিক বা এলএনজিভিত্তিক (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো খসড়ায় বলা হয়, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বাংলাদেশ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ২০২১ সাল নাগাদ পুরেনো প্রায় ২০টি কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট। ২০৩০ সাল নাগাদ আরও বেশ কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ করার প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে বন্ধ হতে যাওয়া কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ৫ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট।
পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর বর্তমান অবস্থা ও দক্ষতা বিবেচনা করে কেন্দ্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, পুর্নবাসন, যন্ত্রপাতির দক্ষতা বৃদ্ধি বা বন্ধ করা অথবা ভেঙে ফেলে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতিপূর্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সুপারিশ তালিকায় চারটি কেন্দ্র রয়েছে ডিজেলচালিত। এগুলো হচ্ছে রংপুর (২০ মেগাওয়াট), ভেড়ামারা (৬০ মেগাওয়াট), বরিশাল (৪০ মেগাওয়াট) ও সৈয়দপুর (২০ মেগাওয়াট)।
তালিকায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে কুমারগাঁও (২০ মেগাওয়াট), টঙ্গী (১০৫ মেগাওয়াট), শাহজীবাজার (৭০ মেগাওয়াট), শিকলবাহা (৬০ মেগাওয়াট), রাউজান (৪২০ মেগাওয়াট), ফেঞ্চুগঞ্জ (৯৭ মেগাওয়াট), হরিপুর (৬০ মেগাওয়াট), সিদ্ধিরগঞ্জ (২১০ মেগাওয়াট), বাঘাবাড়ী (১০০ মেগাওয়াট) ও ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। পাশাপাশি বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, এগুলো সবই ২০২১ সালের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। এর বিপরীতে জ্বালানি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে পুরোনো কেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। চলতি বছর থেকে নির্মাণাধীন বড় কেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে উৎপাদনে আসবে। ফলে এই সিদ্ধান্তে বিদ্যুতের সার্বিক উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
আপনার মতামত লিখুন :