শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:১০ রাত
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:১০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যে কারণ সৌদি আরব ছাড়তে চান অনেক তরুণী

মুহাম্মদ নাঈম : কিছুদিন আগে সৌদি আরবে নিজের পরিবার থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডের একটি হোটেল কক্ষে দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনান। যে ঘটনা সারা বিশ্বের নজরে পড়েছিল রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে নিজের বাড়িতে নির্যাতন এবং দমন পীড়নের অভিযোগ তুলে প্রতিবছর শত শত নারী পশ্চিমা দেশগুলোয় পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অনেকের পছন্দের জায়গাগুলোর একটি তা হলো যুক্তরাজ্য। সূত্র : বিবিসির

বাসমা খালিফা সৌদি আরব থেকে এক রকম পালিয়ে বেঁচেছেন। তিনি বলছিলেন, কেন সবকিছু ছেড়ে সৌদি তরুণীরা এই পথ বেছে নিচ্ছেন?
''আমি এক বছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছি, কিন্তু আমার বাবা আমাকে জোর করে ধর্মীয় নিয়মকানুন পালন করতে বাধ্য করতেন, যদিও সেই ধর্মে আমি আর বিশ্বাসী নই। অভিভাবকত্ব আইনের কারণে আমার জীবন নিয়ন্ত্রণ করতেন আমার পিতা। তিনি সিদ্ধান্ত নিতেন কোথায় আমি থাকবো, কি পড়বো, কোথায় যাবো। সামান্য জিনিসের জন্যও তার কাছে চাইতে হতো, যা একজন নারী হিসাবে আমার কাছে অপমান বলে মনে হতো।''
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, নারীদের জন্য পুরুষ অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক। যার মানে বিয়ে, পাসপোর্ট করা বা বিদেশ ভ্রমণ করতে হলে একজন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি লাগবে। তিনি বাবা, স্বামী, ভাই বা কখনো সন্তান হতে পারেন।

গত বছর একজন নারীর কানাডায় পালিয়ে যাওয়া দেখে উৎসাহিত হন রাওয়ান। তবে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ভ্রমণে যাওয়া পর্যন্ত তাকে ধৈর্য ধরতে হয়।

ফেরার পথে তারা যখন লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে তারা ট্রানজিট নেন, সেই সময় টিকে তিনি পালানোর জন্য বেছে নেন।

''যখন আমরা হিথরো এলাম, আমার পরিবারের সদস্যরা বাথরুমে গেলো। আমি জানতাম, আমার হাতে পালানোর জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় আছে, যখন বিমান বন্দরের কোন কর্মীর কাছে আমার শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় চাওয়ার নোট তুলে দিতে হবে। যখন পুলিশ আমার পরিবারকে জানালো, তখন তারা আমাকে ফোন করে আমার ইচ্ছা বদলের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি তাদের ফোন ধরিনি।''

সৌদি আরবে রেস্টুরেন্টে নারী-পুরুষের এক সঙ্গে বসার ওপর আছে অনেক বিধিনিষেধও রয়েছে। সৌদি আরব ছাড়তে চাওয়া এই তরুণীরা অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন আর একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ব্যবহার করে তাদের পালানোর ব্যাপারে আলোচনা করে।এখন পর্যন্ত তিনশোর বেশি নারী এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আশ্রয় আর পালানোর পথ বিষয়ে পরামর্শ চান। ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেল, শুধুমাত্র নারীরাই নয়, অনেক পুরুষও সৌদি আরব ছাড়তে চান। এখন এসেক্সে বসবাসকারী এরকম একজন মোয়াদ আল-ও-তাইবি, যিনি রাজনৈতিক আর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারণে সৌদি আরব ছেড়েছেন । তিনি বলছেন, ''আমার পিতা ছিলেন অত্যন্ত কঠোর, যিনি আমাকে শারীরিক আর মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। আমার এমন মানসিক সমস্যা হয়ে গিয়েছিল যে একসময় আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করতাম। সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে সবসময়েই আমি উচ্চকণ্ঠ ছিলাম, একপর্যায়ে আমি রাজনীতি নিয়ে কথাবার্তা রেকর্ড করি, যা আমার জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিল। এখানে আসার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, এরকম আরো যারা আসতে চায়, তাদের সহায়তা করবো। তাদের অনেকে কখনোই বিদেশে যায়নি। তাই আমি তাদের আবেদন করা থেকে আশ্রয় চাওয়ার পদ্ধতির সবকিছু বুঝিয় বলি।''

সৌদি আরব থেকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৪ সালের পর থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

যদিও তাদের মাতৃভ‚মি, সৌদি আরবে গত কয়েক বছরে পরিবর্তন এসেছে। যেমন নারীদের গাড়ি চালনা, ভোট দেয়া আর স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেকের জন্য এগুলো পর্যাপ্ত নয়।

সৌদি আরবে যদিও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, তবে দেশটির অনেক নারী এখনো তাতে খুশি নন। যেমন রাওয়ান কার্ডিফে একা ঘুরে বেড়াাতে এবং দোকানের পণ্য দেখে বেড়াতে ভালোবাসেন, সৌদি আরবে যে সুযোগ তিনি কখনোই পাননি।

এখানে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে সপ্তাহে ৫০ ডলার পান, যাতে তার চাহিদার অনেক কিছুই কেনা সম্ভব হয় না।পরিবার থেকে পালিয়ে আসার জন্য তার কি কখনো আফসোস হয়? রাওয়ানের একবাক্যের উত্তর, না।

কারণ তিনি জানেন, এখানে তার জীবনযাপন হয়তো কঠিন হবে, তা সত্ত্বেও রক্ষণশীল সৌদি রাজতন্ত্রের ভেতর তিনি আর যেতে চান না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়