জাহিদুল কবীর মিল্টন, যশোর প্রতিনিধি: বর্ষা মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই যশোরে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুম বলতে সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়কে গণনা করা হয়। ইতিমধ্যে অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েলে পানি উঠছে তা খুবই কম।
যশোর বিএডিসির পানি পরীক্ষাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, জানুয়ারি মাস থেকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে পানির স্তর সর্বোচ্চ নিচে নেমে যায়। তবে এবার একটু আগেভাগেই ডিসেম্বর মাস থেকেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এবার বর্ষা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আগেভাগেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। সাধারণত বছরে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২৩ মিলিমিটার। এবার হয়েছে তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত। আর একারণেই অনেক টিউওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানির স্তর ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। আর যেগুলোয় পানি ওঠে তা খুবই কম। বর্তমানে পানির স্তর ২০ থেকে ২৫ ফুটে নেমে গেছে। একারণে টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া কৃষিকাজের সেচের কারণেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এসময় ভূগর্ভ থেকে গভীর নলকুপ দিয়ে পানি উঠানো হয়। পানির স্তর স্বাভাবিক হতে প্রায় মাসখানেক সময় লাগে। তবে মে মাসের ১৫ তারিখ থেকে পানির স্তর আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এছাড়া আগে বৃষ্টি হলে পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি জানান, সাধারণত পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে ১৫ থেকে ২০ ফুটের মধ্যে।
বিএডিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় গভীর নলকুপের সংখ্যা এক হাজার ৬শ’ ২টি। এর মধ্যে বিদ্যুতচালিত এক হাজার ৪শ’ ৮৬ টি এবং ডিজেলচালিত একশ ১৬টি। এসব নলকুপ দিয়ে ২৫ হাজার ৪শ’ ৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। অন্যদিকে স্যালো টিউবওয়েলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৮শ’ ৯৯টি। এর মধ্যে বিদ্যুতচালিত ৬ হাজার ৭শ’ ৮৪টি এবং ডিজেলচালিত ৫৭ হাজার একশ ১৫টি। এসব স্যালো টিউবওয়েল দিয়ে একলাখ ২৩ হাজার ৪শ’ ৮২ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, আমাদের দেশে ইরিগেশনের সময় প্রচুর পরিমান পানি অপচয় হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে আমাদের দেশে পানি লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার। উন্নত ধান উৎপাদনকারি দেশ থাইল্যান্ড ও ভিযেতনামে এর অর্ধেক পানি খরচ হয়। এসব দেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পানি খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার লিটার। কৃষিকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পানি অপচয় রোধ করে। বারিড পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে জমিতে পানি দেয়া হয়। আমাদের দেশে জমিতে নালা কেটে পানি দেয়া হয়। ফলে অর্ধেক পানি মাটিতে চুষে নেয়। পানির অপচয় রোধ করতে ইতিমধ্যে বিএডিসির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে যশোর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় উন্নত প্রযুক্তির বারিড পাইপের মাধ্যমে জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে। এতে যেমন পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি জমিতে কম সময়ে দ্রুত পানি পৌঁছে যাচ্ছে। ইরিগেশনের কাজে প্রচুর পানি অপচয়ের ফলে প্রতি বছরে এসময় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দেয়।
শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট রোধ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোর অফিস জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। তারা শহর ও শহরতলীতে স্বল্পমূল্যে গভীর নলকুপ বসিয়ে খাবার পানি সংকট মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর মোশারেফ জানান, যেসব এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়, ওইসব এলাকায় ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে গভীর নলকুপ বসিয়ে খাবার পানিসহ গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহারের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট মোকাবেলার জন্য গভীর নলকুপ বসিয়ে পানি সংকট মোকবেলা করা হয়। গতবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকুপ বসিয়ে পানির সংকট মোকাবেলা করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :