শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯, ০৮:১১ সকাল
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯, ০৮:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাক্তার সাহেব, সরকার আপনাকে যেখানে বদলি করবে সেখানে যাবেন না কেন?

ইমতিয়াজ মাহমুদ : ডাক্তার সাহেবদের এ কথাটা জিজ্ঞেস না করে পারছি না। মানে যেসব ডাক্তার সরকারি চাকরি করেন তাদের। আপনি সরকারি চাকরি নিয়েছেন তো সরকার আপনাকে যেখানে বদলি করবে সেখানে যাবেন না কেন? থাকবেন না কেন? ডিউটির সময় ডিউটি করবেন না কেন? সরকার যদি আপনাকে দুবলার চরে পাঠায়, সেখানে যাবেন। দুবলার চরে যেইটুকু সুযোগ-সুবিধা আছে সেটার মধ্যেই আপনার যেটুকু কাজ সেইটুকু করবেন। বাংলাদেশের মধ্যে (বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাইরে) যেখানেই আপনার বদলি হবে সেখানে আপনাকে যেতে হবে সেটা জেনেই আপনি এই চাকরি নিয়েছেন। তাহলে এখন চাকরির জায়গায় থাকবেন না কেন? না আপনি যে অনেক মেধাবী এবং মেধাবী বলেই চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন এবং চিকিৎসকদের মধ্যেও অপেক্ষাকৃত বেশি মেধাবী বলেই আপনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছেন এটা আমরা জানি। কিন্তু আপনি কেন ভুলে যান যে, আপনি কাজ করবেন বলেই চাকরি নিয়েছেন। সরকার আপনাকে বেতন দেয় কাজ করার জন্য। বেতনটা আপনার মেধার জন্য বৃত্তি নয়, কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক। কাজটা না করে যদি বেতন খেতে থাকেন সেটা তো হালাল হবে না ভাই। এটা অন্যায়। এটা ফাঁকিবাজি। এক অর্থে চুরিও বলতে পারেন। ২. আর চাকরিটা যে বদলিযোগ্য সেটা জেনেই তো চাকরি নিয়েছেন। আগে যেটা বলেছি, সরকার তো আপনাকে বদলি করবেই। কেননা দেশের সর্বত্র ডাক্তারের দরকার হয়, আর দেশের সর্বত্র ডাক্তার রাখার জন্যই আপনাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব তো আপনারা জানেনই। সরকার পয়সা খরচ করে আপনাদের নিয়োগ করেছে যেন উপজেলায় এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বা হাসপাতালগুলো রয়েছে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থেকে। এটা আপনি জানেন না? তাহলে যেখানে পোস্টিং হয় সেখানে যাবেন না কেন? পয়সা নেন না? আপনার যদি প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে পছন্দ না হয়, চাকরি নিলেন কেন? এমন হতে পারে যে আপনি শহরের বাইরে থাকতে পারেন না। তাহলে চাকরি নিলেন কেন? এমন হতে পারে যে বেতনটা আপনার কাছে অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। তাহলে চাকরি নিলেন কেন? সরকারি হাসপাতালে কাজ করতে ভালো লাগে না। তাহলে চাকরি নিলেন কেন? আপনি চিকিৎসক মানুষ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করতেই পারেন। তাই করতেন। সরকারি চাকরি কেন নিলেন? সরকারি কাজটা করবেন বলেই তো চাকরি নিয়েছেন। এখন করবেন না কেন?

আপনার যদি কোনো অভিযোগ থাকে যে, বেতন কম বা ভাতা কম বা এ রকম কিছু, তাহলে সকলে মিলে আন্দোলনও করতে পারেন। কেন নয়? এটা তো আপনার অধিকার। কিন্তু কাজ করবেন না কেন? সকলে মিলে স্ট্রাইক করতে পারেন। সেটাও তো দাবি আদায়ের একটা বৈধ পন্থা। সেগুলো আলাদা কথা। কিন্তু চাকরি করবেন, পোস্টিং দিলে সেখানে গিয়ে জয়েন করবেন আর কাজের সময় থাকবেন না এটা কী রকমের কথা? ৩. দেখেন, চিকিৎস্যসেবা একটি মহান পেশা এ জাতীয় কথাবার্তা আমি বলছি না। মহান তো বটেই, কিন্তু পেশা তো? নাকি? তাহলে সেখানে পেশাদারিত্ব থাকবে না? পেশাদারিত্ব যদি না থাকে তাহলে আপনি কিসের প্রফেশনাল? পেশাদারিত্বেরই এটা অংশ, যে আপনাকে নিয়োগ করবে, যে শর্তে নিয়োগ করবে, যে কাজের জন্য নিয়োগ করবে সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। আর যদি সেটা না পারেন তাহলে নিয়োগকর্তাকে বলবেন যে না ভাই, এটা আমি পারছি না, আপনি অন্য লোক দেখেন। ধরেন একজন ডাক্তার সাহেবের ডিউটি হচ্ছে তিনি হাসপাতালে থাকবেন, হাসপাতালে আসা রোগীদের দেখে চিকিৎসা দেবেন। নির্ধারিত সময়ে তিনি হাসপাতালে যদি না থাকেন তাহলে তিনি কী করছেন? সরকার যেসব রোগীকে চিকিৎসার জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়েছে, ডাক্তার সাহেব সেসব রোগীকে না দেখে অন্যত্র বসে অন্য কিছু করছেন। এটা কী পেশাগত দায়িত্ব পালন হলো? হলো না। একবার বা দু’বার কোনো জরুরি অবস্থা হতে পারে যার জন্য আপনি থাকতে পারলেন না, সেটা আলাদা কথা। কিন্তু নিয়ম করে অনুপস্থিত থাকা? এটা তো অপেশাদার আচরণ, দায়িত্বে অবহেলা। মানে ডাক্তার সাহেবরা পারেন কী করে? আপনার যখন হাসপাতালে থাকার কথা তখন যদি অন্যত্র থাকেন আপনার চিত্ত চঞ্চল হয় না? আপনার কী একবারও মনে হয় না যে রোগীটা এখন চিকিৎসা নিতে আসবে তাকে তো দেখার দায়িত্ব আমার ছিলো, তার চিকিৎসা করার দায়িত্ব আমার ছিলো। আপনার কী মনে হয় না যে আপনার অনুপস্থিতির জন্য একজন রোগীর একটু বাড়তি ভোগান্তি, একটি শিশুর যন্ত্রণার একটি বাড়তি মুহূর্ত, একটি বাড়তি চিৎকার বা একজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একটি দীর্ঘশ্বাস এসব ভেবে আপনার রাতের ঘুমের একটুও বিঘœ হয় না? ৪. শোনেন, আমাদের এখানে তো অনেকেই অনেক কিছু করে পার পেয়ে যায়। ডাক্তার সাহেবরাও পার পেয়ে যান। কিন্তু ঠিকঠাক মতো আইন ও বিধানাবলীর যদি প্রয়োগ হতো, তাহলে এসব নিয়মিত অনুপস্থিত ডাক্তাররা- ওরা নাকি হাসপাতাল ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে- ওদের চাকরি তো চলেই যেতো, সেসাথে ওদের পেশাগত লাইসেন্সও বাতিল হওয়ার কথা। একজন চিকিৎসক তার দায়িত্বে অবহেলা করবে দিনের পর দিন আর তার পরেও তার পেশাগত লাইসেন্স বহাল কেন থাকবে? আমি জানি সকল ডাক্তাররা এ রকমটা করেন না। আমি জানি ডাক্তাররা কী রকম পরিবেশে কাজ করেন। আমি জানি তাদের কতো প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয় ছোট শহরে বা মফস্বলে। তার পরেও বলি, প্রফেশনালিজম বলে একটা কথা আছে। সেটা যদি না বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে অন্য কিছু করেন। আপনারা মেধাবী মানুষ, যা কিছু করবেন তাতেই ভালো করবেন। ডাক্তারি ডিগ্রি আছে এ রকম সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী দেখেছি, কাস্টমস অফিসার দেখেছি, ফারমাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ী তো আছেই। এসব ক্ষেত্রে যেসব ডাক্তারি ডিগ্রিওয়ালাদের দেখেছি, এরা সবাই খুবই সফল। কিন্তু পেশাদার ডাক্তার হলে আপনার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন না। একজন কেরানির অনুপস্থিত থাকা আর একজন ডাক্তার অনুপস্থিত থাকা এক জিনিস নয়। এটা তো আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন আর কী। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়