জাহিদুল কবীর মিল্টন: প্রভাবশালী মহলের দখলের কারণে যশোর সদরের পাঁচটি গ্রাম আগামী বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই মহলটি শহরতলী হরিণার বিলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি করার কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে এলাকার মানুষ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরতলী চাঁচড়া নারায়নপুরের দক্ষিণপাশে হরিণার বিলে এলাকার প্রভাবশালী মফিজুর গোলদার ও সাহাঙ্গীর মোড়ল প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে দুটি মৎস্য ঘের নির্মাণ করছেন। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার বিলপাড়া, সাড়াপোল, রূপদিয়া, ভাতুড়িয়া ও মাহিদিয়া এলাকা তলিয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার পরিবার এলাকা ছাড়া হবার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুমে যশোর শহরের পানি হরিণার বিলে জমা হতো। পরবর্তীতে ওই পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ত। এতে করে পানি নেমে যাবার পর মানুষ চাষাবাদ করতে পারত। আর যে পানি থাকত সেই পানি দিয়েও তারা কৃষিকাজ করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে; এতে করে আগামী বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি নদীতে যাবার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান, নতুন করে এ দুটি মৎস্য ঘের তৈরি হলে এলাকার অন্তত ৫টি গ্রাম তলিয়ে যাবে। বাড়িঘর ছাড়া হবে হাজার হাজার মানুষ। কৃষিজমি কমে যাবে। এছাড়া কমপক্ষে এক হাজার একর কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। মানুষ বেকার হয়ে যাবে।
তারা বলেন, সাহাঙ্গীর মোড়ল ২৪ বিঘা ও মফিজুর গোলদার ৪৫ বিঘা জমি লিজ ও ক্রয় করে মৎস্য ঘের তৈরি করছেন। এছাড়া ঘেরের পাশে যাদের জমি আছে তাদের জমি ঘের নির্মাণের জন্য দিয়ে দিতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তারা জানান, কৃষিজমিতে মৎস্য ঘের তৈরি করতে হলে সরকারের অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই প্রভাবশালী মহলটি এতই ক্ষমতাশালী যে তারা আইনের তোয়াক্কা না করেই মৎস্য ঘের করে চলেছেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ রেজায়ে রাব্বি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা। তবে এলাকাবাসির সমস্যা সৃষ্টি করে কোনো কাজ করা যাবে না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষিজমিতে মৎস্য ঘের নির্মাণের বিষয়ে কথা হয় সাহাঙ্গীর মোড়লের সাথে। তিনি বলেন, যে জমিতে ঘের করা হচ্ছে সে জমিতে একবার ফসল হয়। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানি বের হওয়ার পথ আছে। ঘের করতে অনুমতি নিতে হয়, এ বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।
অপর দখলদার মফিজুর গোলদার বলেন, তিনি প্রায় ৪৫ বিঘা জমির উপর ঘের তৈরি করছেন। কিছু জমি তার নিজের, কিছু জমি লিজ নিয়েছেন। তিনি যে জমিতে ঘের করছেন, সে জমিতে বছরে একবার ফসল হয়। তিনি বলেন, এখানে ঘের করলে পানি বের হবার কোনো সমস্যা নেই। বর্ষা মৌসুমে পানি বের হবার ব্যবস্থা তিনি করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমি ছাড়া এখানে অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে আরো ঘের করা হচ্ছে। চাঁচড়া এলাকার নিরিবিলি হ্যাচারির মালিক আনোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন অপরিকল্পিতভাবে ঘের করছে।
অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের তৈরির বিষয়ে নাগরিক আন্দোলন কমিটির নেতা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন,অপরিকল্পিত ঘের এই অঞ্চলের জরাবদ্ধতার একটা অন্যতম কারন।অনেক গুলি কারনের মধ্যে এটাও একটা কারণ। ঘের সংক্রান্ত সরকার নীতিমালা করেছে। সর্বক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। এই ক্ষেত্রে হরিনার বিলে বা ওই অঞ্চলে কোন ঘের করার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রতিপাদিত হওয়া উচিত।ওই অঞ্চলে যে ঘের হচ্ছে সে বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার।
আপনার মতামত লিখুন :