মানবজমিন : উপজেলা পরিষদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিগত জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলটি। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, শুধু এ দুটি নির্বাচন নয়, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে আর কোনো নির্বাচনেই যাবে না ইসলামী আন্দোলন। অন্যদিকে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে এ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাম গণতান্ত্রিক জোট। আটটি বাম দলের এ জোট নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। এ নিয়ে জোটে দুই ধরনের মত রয়েছে। কেউ বলছেন সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার মানে সরকারকে বৈধতা দেয়া। আবার কেউ বলছেন, দলীয় রাজনীতি চাঙা রাখতে নির্বাচনে যাওয়া উচিত।
নির্বাচনে যাচ্ছে না ইসলামী আন্দোলন: দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম মানবজমিনকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না এটা অতীতে সব নির্বাচনে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, তাতে দলের সিদ্ধান্ত অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন। দলটির একাধিক নেতা জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। ভোটের নামে ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে আমরা এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী না। সেটা উপজেলা নির্বাচন হোক আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হোক। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা না দেয়ার বিষয়ে ঘোষণা দেবে ইসলামী আন্দোলন। যদিও গতকাল দলটির একজন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে ২৯৯ জন প্রার্থী দেয় দলটি। এর মধ্যে ২২টি আসনে দলের প্রার্থী ভোটের হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। তারপরও ইসলামী আন্দোলন একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে।
দোটানায় বাম জোট: আসন্ন উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি থাকলেও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে অংশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ৮টি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম জোটের নেতারা নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে দোটানা অবস্থায় আছেন। এবিষয়ে বাম জোটের অন্যতম মুখপাত্র ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, যেকোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বাম জোট সর্বদাই প্রস্তুত থাকে। তবে, গত ৩০শে ডিসেম্বর দেশবাসীর ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সরকার যে প্রহসনের নির্বাচন উপহার দিয়েছে, তার পর নির্বাচনে অংশ নেয়া মানে ঐ সঘোষিত সরকারকে মেনে নেয়া। যা বাম জোটের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলনে বাম জোট যেমন রাস্তায় ছিল, এখনো থাকবে। পাশাপাশি নির্বাচনের সম্পূর্ণ পরিবেশ অবলোকন করবে।
যদি নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে একটি সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, তাহলেই স্থানীয় সরকার ও ডিএনসিসি উপনির্বাচনে অংশ নেবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তা না হলে, নিজেদের দাবি আদায়ে রাজ পথের আন্দোলনকেই বেছে নেবে বাম জোট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো জোটের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে শরিকদলগুলোর অনেকেই তাদের প্রার্থীর নাম মনোস্থির করে রেখেছে। এর মধ্যে সিপিবির ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের নামও রয়েছে। যদি বাম জোট নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে শরিক দলগুলোর সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্য থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
আর এই সবই করা হবে জোটগত বৈঠকের পর। বাম জোটের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে এখন আমরা দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক, ৩০শে জানুয়ারি দেশব্যাপী কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করবো। এরপরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।