শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:১৮ সকাল
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৯:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জোর প্রচারে নওফেল নীরব ভোটের আশায় কারাবন্দি শাহাদাত

কালের কন্ঠ  :  নগরের কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানা এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৯ আসনের যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্বাচনী পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। গতকাল রবিবার এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রধান সড়ক, উপসড়ক, অলিগলি, দোকানপাট থেকে শুরু করে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে নৌকার নির্বাচনী পোস্টার বা প্রচারপত্র নেই। পাশাপাশি সমানে চলছে মাইকিং এবং প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের গণসংযোগ। প্রায় প্রতিটি এলাকায় নওফেলের পক্ষে রাত-দিন প্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও।

এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। তবে তাঁর কোনো নির্বাচনী পোস্টার নেই প্রায় এলাকায়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে।

গতকাল রবিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে নগরের নুর আহম্মদ সড়কে মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকা ছেয়ে আছে নওফেলের নির্বাচনী পোস্টারে। বিএনপির এই কার্যালয়টি ডা. শাহাদাতের নির্বাচনী এলাকায়। ওই কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় নওফেলের বিপুলসংখ্যক নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানার দেখা যায়। তবে বিএনপি কার্যালয়ের গেটের পাশে গলির মুখে ডা. শাহাদাতের একটি ব্যানার চোখে পড়ে। যদিও সেই ব্যানারের পাশেও আছে নওফেলের একটি ব্যানার। এ ছাড়া এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাঝে মধ্যে ধানের শীষের দু-একটি পোস্টার চোখে পড়লেও শাহাদাতের পক্ষে প্রকাশ্যে কোনো গণসংযোগ দেখা যায়নি।

এই আসনের সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। আসনে নৌকার ‘মাঝি’ নওফেল এবং ধানের শীষের ‘চাষি’ শাহাদাতের পাশাপাশি আরো ছয়জন প্রার্থী মাঠে আছেন। নির্বাচনী মাঠে নওফেল ও শাহাদাত উভয়েই নতুন।

গতকাল ভোটার ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৯ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার নওফেল আর বিএনপির ডা. শাহাদাতের মধ্যে। তবে এই মুহূর্তে প্রচার-গণসংযোগে অনেক এগিয়ে রয়েছে নৌকা। চট্টলবীর হিসেবে পরিচিত বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে নওফেল যেখানে যাচ্ছেন সেখানে ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে। তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ দল ও জোটের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্ষ, উপ-উপাচার্ষ, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতের খ্যাতনামা ২০-২৫ জন তারকা নওফেলের পক্ষে দুই দফায় প্রচার চালান।

অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাতের পক্ষে এখনো জমে ওঠেনি ভোটের মাঠ। প্রচারে তিনি অনেক পিছিয়ে। তবে চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন নেতা এরই মধ্যে ডা. শাহাদাতের পক্ষে চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রচার চালিয়েছেন।

নগরের কোতোয়ালি মোড় এলাকার বাসিন্দা ফোরকান উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবদান চট্টগ্রামবাসী সহজে ভুলতে পারবে না। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাঁর কাজের কারণে তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। তিনি চট্টগ্রামের জন্য অনেক উন্নয়নকাজ করেছেন। তাঁর প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আবেগ রয়েছে। তাই নওফেল শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন, তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে। বিপুল ভোটে এখানে নৌকা বিজয়ী হবে।’

পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা মহানগর তাতি লীগের সদস্য সচিব রত্নাকর দাশ টুনু বলেন, ‘এই আসনে অনেক সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে। শুধু সংখ্যালঘু নয়, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ভোট পাবেন নওফেল। আমরা দলের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সরকারের উন্নয়নের চিত্র এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরছি। দল ও সহযোগী সংগঠনের সবাই নেমেছে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে।’

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজ সড়কের পাশে দাঁড়ানো রফিক নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘চারদিকে তো শুধু নওফেলের নাম শুনছি। এখানে উনি ভোট পাবেন। ওর (নওফেল) কথা-বার্তাগুলো ভালো। এলাকায় উন্নয়নের অনেক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’

লালদিঘী পাড় এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সব জায়গায় নৌকার পোস্টার ও প্রচার থাকলেও বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত ভোট পাবেন। তিনি (শাহাদাত) কারাগারে। মানুষ ভোটকেন্দ্রে গেলে নীরবে তাঁকে ভোট দেবে।’

নন্দনকানন এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী না হলেও দলীয় প্রার্থী নওফেলের জন্য সবাই কাজ করছি। প্রতিটি এলাকায় প্রতিদিন সমানে আমরা প্রচার চালাচ্ছি।’

বাকলিয়ার বাসিন্দা ও বিএনপির সমর্থক আব্দুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের তো ঠিকমতো শাহাদাত ভাইয়ের পক্ষে প্রচার চালাতে দিচ্ছে না। পুলিশ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সরকারি দলের লোকজন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। বাকলিয়া থেকে তিনি (শাহাদাত) অনেক ভোট পাবেন। মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে।’

একই এলাকার এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বাকলিয়ার ভোটব্যাংক যেদিকে যাবে সে প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে এখানে ভোট কোনো প্রার্থী এককভাবে পাবেন না।’

এ আসনে অপর প্রার্থীরা হলেন ওয়াহিদ মুরাদ (ইসলামিক ফ্রন্ট, চেয়ার); শেখ আমজাদ হোসেন (ইসলামী আন্দোলন, হাতপাখা); মৃণাল চৌধুরী (কমিউনিস্ট পার্টি, কাস্তে); মৌলভী রসিদুল হক বিএসসি (খেলাফত আন্দোলন, বটগাছ); আবু আজম (ইসলামী ফ্রন্ট, মোমবাতি); মো. মোরশেদ সিদ্দিকী (জাতীয় পার্টি-জেপি, বাইসাইকেল)।

এদিকে গতকাল ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ও ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাঁর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাকলিয়া এলাকায় সোয়া এক লাখের বেশি ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী কারাগারে। দলের অনেক নেতাকর্মীও কারাগারে। আমার বাসার সামনে এখন পুলিশ ঘিরে আছে। যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারি। শুধু শাহাদাত ভাই নয়, আমাদের সব প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে বাধা দিচ্ছে। আমরা প্রচারণা কিভাবে চালাব? তবে সুষ্ঠু ভোট হলে এবং মানুষ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে ভোটবিপ্লব হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়