প্রভাষ আমিন : ১. গত ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা। পরদিন ১০ ডিসেম্বর বৈধ প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে শুরু হয় তিন সপ্তাহের প্রচারণা। কিন্তু এই লেখা যখন লিখছি (২০ ডিসেম্বর) তখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা যায়নি। প্রায় প্রতিদিনই উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থী তালিকা ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে, এমনকি বদলে যাচ্ছে প্রতীকও। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে না পারায় ব্যালট পেপার ছাপার প্রস্তুতিও নিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। কমিশন সচিব এ ব্যাপারে তাদের অসহায়ত্বের কথাও লুকাননি। সব নির্বাচনেই সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে যান। তবে এবার এই সংখ্যাটা নজিরবিহীন। নির্বাচন কমিশন সচিব জানিয়েছেন, এবার অন্তত ৫০ জন প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বদলে গেছে উচ্চ আদালতে। তাদের কেউ কেউ প্রার্থিতা ফিরে যেমন পেয়েছেন, আবার কেউ কেউ হারিয়েছেনও। এমনও হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার বাতিল করেছেন, নির্বাচন কমিশন তা পাল্টে দিয়ে বৈধ করেছেন, আবার হাইকোর্ট তা বাতিল করেছেন, কিন্তু আপিল বিভাগ তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ যেন এক মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেহারা।
আমরা অবশ্যই চাই, কেউ যেন কোনোরকম বঞ্চিত না হন, সবাই যেন আইনের সমান সুযোগ পান। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলমান রাখার স্বার্থে এর একটা সময়সীমা থাকা উচিত। এখন তো মনে হচ্ছে, কিছু সিদ্ধান্ত নির্বাচনের আগে শেষ হবে না। এর দায় অনেকটাই নির্বাচন কমিশনের, কিছুটা রিটার্নিং অফিসারদের। তারা ছোটখাটো ভুলেও অনেকের মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছিলেন। সব জায়গায় একই নিয়ম অনুসরণ করেননি। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিলো, নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের প্রার্থিতা, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপিদের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া। প্রয়োজনে তারা উচ্চ আদালতের কাছে আগেই নির্দেশনা চাইতে পারতেন। তাহলে আর এখন এই জটিলতা পোহাতে হতো না। নির্বাচন কমিশন সচিবকেও আক্ষেপ করে বলতে হয়, হিরো আলমও তাদের হাইকোর্ট দেখায়। অবশ্য এটা খুবই আপত্তিকর কথা। নির্বাচন কমিশনের কাছে সব প্রার্থী সমান মর্যাদা পাওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশন সচিব, হিরো আলমকে হেয় করেছেন। এখনও আরো অনেকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে। নির্বাচন যে কবে আদালত থেকে কমিশনে ফিরবে কে জানে। দেখে তো মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে কোনো কোনো আসনে ভোট গ্রহণের দিন মোবাইল প্রিন্টার দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপতে হবে।
২. নির্বাচনের আর মাত্র হাতে গোনা কদিন বাকি। এই সময় কমিশনের নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকার কথা। তা না করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা আর কমিশনার মাহবুব তালুকতার ব্যস্ত মাঠের লেবেলত্ব নিয়ে। সিইসি দাবি করছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে। মাহবুব তালুকদার বলছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটি অর্থহীন কথা। পরদিন আবার সিইসি বলেন, মাহবুব তালুকদার অসত্য কথা বলেছেন। পরদিন আবার মাহবুব তালুকদার বলছেন, সিইসি তার অস্তিত্বে আঘাত করেছেন। সিইসি আর কমিশনারের কথার লড়াইয়ে আপনি কি বুঝছেন? আমি মাহবুব তালুকদারকেই বিশ্বাস করছি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই এখনও, এটাই বাস্তবতা। সিইসি মুখে বললেই তো আর বাস্তবতা পাল্টে যাবে না। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান
আপনার মতামত লিখুন :