শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:২৪ রাত
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘বিএনপির অর্থ নেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেন’

বিভুরঞ্জন সরকার : নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। দেশের অনেক জায়গাতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিএনপিও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার বিএনপিকে বাধাও দেয়া হচ্ছে। হামলা-ভাঙচুর-আক্রমণের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচনী খেলার মাঠে আওয়ামী লীগের ভূমিকা আক্রমণাত্মক, বিএনপি রক্ষণাত্মক। আওয়ামী লীগ জয়ের জন্যে মাঠে আছে। প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছে। বিএনপি আছে ‘গায়েবি’ শক্তির অপেক্ষায়। তারা মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইবে না, কোনো প্রস্তুতিমূলক কাজ করবে না, ৩০ ডিসেম্বর গায়েবি শক্তি ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে হাজির করবে এবং তারা ধানের শীষে ভোট দেবে।

বিএনপির কার্যক্রম থেকেই এটা স্পষ্ট যে, তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় – সেটা প্রমাণে। অনেকেই মনে করছেন, দুই দলেরই আশা পূরণ হবে। অর্থাৎ ক্ষমতায় ফিরবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রমাণ করতে পারবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন নানা উপায়ে নৌকার জন্য দেশবাসীর কাছে ভোট চাইছেন । ধানের শীষের জন্য ড. কামাল হোসেনকে সেভাবে ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে না। তার তৎপরতা কূটনীতিক, গণমাধ্যম এবং নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ উত্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী বক্তৃতায়ও বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করছেন। এর মধ্যে নানা ‘ষড়যন্ত্র’ সম্পর্কেও তিনি বলছেন। ২০ ডিসেম্বর তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় তারা ( বিএনপি) মুজিব কোট পরে, নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে গোলমাল করবে, ভোট কারচুপি করবে এবং আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাবে’। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) একেকজন অগাধ সম্পত্তির মালিক। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবার, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ- বিভিন্ন পন্থায় তারা এতো টাকা কামাই করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের টাকার কোনো অভাব নেই’। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণের অর্থ জনগণের কাছে পৌঁছাক। তাদের অর্থ নেন আর নৌকা মার্কায় ভোট দেন’।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবে। বিএনপির যেসব ষড়যন্ত্রের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেগুলো তো আর তাদের বাস্তবায়ন করতে পারার কথা নয়। যেহেতু তাদের পরিকল্পনার কথা সরকার পক্ষ আগেই জেনে গেছে, সেহেতু সরকার পক্ষ সাবধান হতে পারবে। আগাম ‘প্রিভেনটিভ’ ব্যবস্থা নিতে পারবে। মুজিব কোট পরে, নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিকল্পনা বিএনপি নেয়ায় এখন কী ভোটকেন্দ্রে মুজিব কোট আর নৌকার ব্যাজ নিষিদ্ধ করা হবে? বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। বিএনপির অর্থ ছড়ানোর কথা বলে প্রধানমন্ত্রী তা অকার্যকর করার উপায়ও বলেছেন। টাকা নেবেন বিএনপির, ভোট দেবেন নৌকায়।

আমার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রায় একই ধরনের একটি বক্তৃতার কথা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমাদের পঞ্চগড় থেকে একজন বড় শিল্পপতি-ব্যবসায়ী প্রার্থী হয়েছিলেন। তার নাম মকবুলার রহমান। তিনি ছিলেন মুসলিম লীগের প্রার্থী। তার মার্কা ছিলো লণ্ঠন। মকবুলার রহমান প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করেছিলেন। পঞ্চগড়ে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মকবুলার রহমান কলেজ, এখন সরকারি হয়েছে। সব ইউনিয়নে দু-চারজন কর্মীদের হোন্ডা দিয়েছিলেন। ট্রাক বোঝাই করে লণ্ঠন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিলি করেছিলেন। সে সময় এসব কিছু ছিলো ব্যাপক আলোচনার বিষয়। প্রচারে তিনি ছিলেন এক নম্বরে। আওয়ামী লীগ তথা নৌকা মার্কার জনপ্রিয়তা বেশি ছিলো কিন্তু অনেকেই মনে করতেন ভোটে দাঁড়িয়েছেন দুইজন- শেখ মুজিবুর রহমান এবং মকবুলার রহমান।

নির্বাচনী প্রচারের জন্য সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম ‘শেখ সাহেব’ আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছিলেন। দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেয়ার কিছু নাই, বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’। বক্তৃতার প্রায় শেষে এসে বলেছিলেন, শুনলাম, এখানে একজন দাতা হাতেমতাই নির্বাচন করছেন, টাকা বিলাচ্ছেন। আমি বলবো, টাকা আপনারা নেন। ওই টাকায় আপনাদের হক আছে। তবে ভোট দেবেন হিসাব করে, ভেবেচিন্তে।

হ্যাঁ, ১৯৭০-এর নির্বাচনে মানুষ ভেবেচিন্তেই ভোট দিয়েছিলেন, নৌকা মার্কার বিপুল বিজয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় অনিবার্য করে তুলেছিলো। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এ বছরের শেষ দিনের নির্বাচনেও মানুষ ভাবনা-চিন্তার বাইরে যাবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ এবারের ভোটযুদ্ধে নৌকার পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়