কালের কন্ঠ : আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পাঁচটি নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, একটি কার্যালয়ে বোমা হামলাসহ অগ্নিসংযোগ, দুটি নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর এবং মহাজোট প্রার্থীর এক নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাতে এসব হামলায় আহত হয়েছে আওয়ামী লীগের ২৭ নেতাকর্মী এবং এ জন্য বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
গাজীপুরে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগকালে পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। কুমিল্লায় এক বিএনপি প্রার্থীর গাড়ি ও বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিএনপির চার নেতাকর্মী আহত হয়। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রচার মাইক ও প্রচারকাজে ব্যবহৃত অটোরিকশা ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের এক এমপি প্রার্থীসহ বিএনপি-জামায়াতের ২৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঝিনাইদহ-৩ আসনের অধীন কোটচাঁদপুর উপজেলার সাইনবোর্ড বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে দুজন আহত হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে বিএনপির দুই নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বরিশাল সদরের কাশিপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালী এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে একই রাতে আগুন দেওয়া হয়। এ জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। বাগেরহাটের রামপালে সোনাতুনিয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় দুই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকার মধ্যকূল এলাকায় এক যুবলীগকর্মীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বগুড়া-৩ আসনের অধীন আদমদীঘি উপজেলার তালশন কালীবাড়ি এলাকায় মহাজোটের লাঙল প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার অধীন এনায়েতপুর থানার দৌলতপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এই হামলায় আওয়ামী লীগের ১৮ নেতাকর্মী আহত হয়। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ওফাপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে বোমা হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ১৪-১৫টি বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে নির্বাচনী প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাতে পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুর গাড়িতে ককটেল হামলা চালালে পাঁচজন আহত হয়। এ ছাড়া সখীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক সরকারের বাড়িতে ককটেল হামলা চালানো হয়।
অন্যদিকে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল এলাকার মাজুখান বাজারে বিএনপি প্রার্থী কারাবন্দি ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হকের গণসংযোগ চলাকালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিএনপি প্রার্থীর কর্মীদের ওপর হামলা করলে চারজন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ উল্টো বিএনপির চারজনকে গ্রেপ্তার করে। কুমিল্লা নগরীতে কুমিল্লা-৫ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক মো. ইউনুসের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে হামলা ও ফাঁকা গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাঁর গাড়ি ও বাড়ির গেট ভাঙচুর করা হয়।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর প্রচারকাজে ব্যবহৃত অটোরিকশা ও মাইক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় জাপার এক কর্মীকে মারধর করা হয়।
এ ছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ এবং নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিএনপির ২৯ এবং জামায়াতের ২৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গাজীপুরের পুবাইলে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারকালে হামলার শিকার হওয়ার পরও বিএনপি প্রার্থীর চার নেতাকর্মী, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বিএনপির দুই নেতকর্মী, একই ঘটনায় বাগেরহাটের রামপালে জামায়াতের চার নেতাকর্মী, যশোরের ঝিকরগাছায় যশোর-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা সাবেক এমপি আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসেন, মাদারীপুরের কালকিনি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বেপারীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসহ দুই নেতা, পটুয়াখালীতে একটি বিস্ফোরক আইনে এক অজ্ঞাত অভিযোগের মামলায় জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান শিকদারসহ বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মী, গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকিরসহ তিন নেতাকর্মী, ঝালকাঠি-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জীবা আমিন খানের সংবাদ সম্মেলন চলাকালে ছাত্র ও যুবদলের ছয় নেতাকর্মী, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া কুড়িগ্রামে নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে জামায়াত নেতা এক মাদরাসা শিক্ষককে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।