যুগান্তর : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ফেসবুক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুটি কমিটি গঠন করেছে ইসি। এছাড়া ভোট গ্রহণের পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। এছাড়া ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে সারা দেশে সব ধরনের প্রচার, সভা ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পরিপত্র জারি করতে যাচ্ছে কমিশন। এতে ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল ও ২৯ ডিসেম্বর মধ্য রাত থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। ইসি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, প্রার্থী ছাড়া অন্যদের বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়ে চিঠি দেয়া হবে। ওই চিঠির আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ভোট গ্রহণের ৭ দিন আগে লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র থানা বা ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে। ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব অস্ত্র জমা দিতে হবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বৈধ অস্ত্র জমা দিতে হবে না। একই ভাবে সরকারি কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা অনুরূপ নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার প্রয়োজন হবে না। নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিপত্র জারি করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী ও ২০ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হবে। জানা গেছে, এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৈধ অস্ত্র জমা নেবে না। তবে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে। প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বৈধ অস্ত্র রাখার বিষয়টি শিথিল থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া চিঠির ভিত্তিতে দু-এক দিনের মধ্যে সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশনা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ক্ষেত্রে বিশেষে সীমিত সময়ের জন্য অস্ত্র থানায় জমা নেয়ার বিষয়ে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনের ১৫ দিন আগ থেকে ভোটের ২ দিন পর পর্যন্ত অথবা আলোচনা অনুসারে নির্ধারিত সময়ে বৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। তবে অস্ত্র জমা নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা অস্ত্রধারীর নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তবে সম্প্রতি কমিশন প্রার্থী ও বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অন্যদের বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ দিনের জন্য লাইসেন্সধারীরা অস্ত্রসহ চলাচল করতে পারবেন না। আর নির্বাচনের ৭ দিন আগে অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানা বা ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অস্ত্র জমা দেয়ার প্রয়োজন হবে না। একই ভাবে সরকারি কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা অনুরূপ নিরাপত্তা কাজে ব্যবহৃত বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার আওতাভুক্ত হবে না। সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেয়নি কমিশন। তবে এর আগের নির্বাচনে বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া হয়েছিল।
গুজব প্রতিরোধ ও ভোট গ্রহণ মনিটরিংয়ে দুটি কমিটি গঠন : নির্বাচন কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে পরিবেশ-পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে তা মনিটরিংয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ইসি। এ কমিটি ফেসবুকসহ অন্যসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটর করবে এবং গুজব বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচার চালাবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য মনিটরিং করবে।
ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এখন থেকে ২৪ ঘণ্টা এ টিম ফেসবুকসহ যে কোনো মাধ্যমে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব রোধে কাজ করবে। এছাড়া অপপ্রচারও খতিয়ে দেখবে তারা। অপরদিকে একই কার্যক্রমের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে। কমিটির সদস্য হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, র্যাব, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলি কমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে ২৪ ঘণ্টা এ কমিটি সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করবে। মনিটরিংয়ে নির্বাচনবিরোধী কোনো গুজব কিংবা অপপ্রচার প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট দফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেবে এ কমিটি। এছাড়া ভোট গ্রহণের দিনের পরিস্থিতির তথ্য জানতে আরেকটি কমিটি গঠন করেছে ইসি।
২৮ ডিসেম্বর থেকে প্রচার ও সভা-সমাবেশ বন্ধ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে পরিপত্র জারি করা হবে তাতে প্রচার ও সভা-সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের কথা উল্লেখ করা হবে। এতে বলা হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হবে। এ অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে সব ধরনের প্রচার এবং সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞা প্রতিপালনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য স্থানীয়ভাবে প্রচারও চালাবে প্রশাসন।