শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:৫৯ দুপুর
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:৫৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ইউজিসির সতর্কতা

বণিক বার্তা : বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা। ক্যাম্পাস-প্রোগ্রামেরও অনুমোদন নেই। অবকাঠামো সুবিধার ঘাটতিসহ অনুপস্থিত শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। বেসরকারি এমন ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি বলছে, অনুমোদনবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস কিংবা অননুমোদিত কোনো কোর্স বা প্রোগ্রামে ভর্তি হলে তার দায়-দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি নেবে না।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, তার মধ্যে বেশকিছু পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। ইবাইস, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও গণবিশ্ববিদ্যালয় এর অন্যতম। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, দারুল ইহসান ও কুইন্স ইউনিভার্সিটির বিষয়েও একই সতর্কতা জারি করেছে ইউজিসি। সতর্কতা জারি করা হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় থাকা রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, কেরানীগঞ্জ; রূপায়ণ একেএম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ; জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী; শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী; খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, বরিশাল ও ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও। এ তালিকায় আরো আছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।

উচ্চশিক্ষা নিতে এসে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতারণা বা ক্ষতির শিকার না হন, সেজন্য সময়ে সময়ে বিজ্ঞপ্তি কিংবা নোটিস জারির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তুলে ধরে ইউজিসি। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ। ওই প্রতিবেদনে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো কোর্স বা প্রোগ্রাম অথবা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থী ভর্তিতে সতর্কতা জারি করেছে ইউজিসি।

জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে গত দুই দশকে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার ধারণা থেকে সরে এসে শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। মানহীন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সতর্ক করতে ইউজিসি সময়ে সময়ে সতর্কতামূলক নোটিস ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।

ইউজিসির সতর্ক করা তালিকার প্রথমেই আছে ইবাইস ইউনিভার্সিটির নাম। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্বন্দ্বের বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দুটি ভাগে বিভক্ত। একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা করেছে। দ্বন্দ্ব নিরসন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইউজিসির পদক্ষেপ নিয়েও একটি পক্ষ আদালতে মামলা করেছে।

সতর্কতার তালিকায় থাকা আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠিকানায় গিয়ে আইন অনুযায়ী ফ্লোর স্পেস, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নেই।

সনদ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে। ইউজিসির এক তদন্ত প্রতিবেদনে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। কোনো শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়নি। উল্লিখিত ঠিকানায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনো অবকাঠামো, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত নেই, কোনো শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয় না। অথচ সেখানে অসংখ্য সার্টিফিকেট তৈরি করা হচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে রক্ষিত কয়েকটি কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রোগ্রামের অবৈধ সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। কম্পিউটারে সংরক্ষিত ফাইল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রায় ১১২ জনকে বিভিন্ন প্রোগ্রামের সার্টিফিকেট প্রদানের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিকে ইউজিসির খামখেয়ালিপনা বলে দাবি করেন আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মুহা. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কী কারণে এ ধরনের বিজপ্তি, ইউজিসি সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছি। এ ধরনের একপেশে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন না।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিষয়ে সতর্ক করে ইউজিসি বলেছে, ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পুনরায় শুরুর অনুমতি প্রদান করা হয়নি। একইভাবে কুইন্স ইউনিভার্সিটি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকার কর্তৃক বন্ধ। ২০১৫ সালে শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জন্য সাময়িকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পত্র দেয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে তা চালু করতে পারেনি বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়।

আদালতে কুইন্স ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইউজিসি। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। পরে রিট পিটিশনের মাধ্যমে আদালত কর্তৃক তা স্থগিত করা হয়।

একইভাবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মামলা থাকায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ক্ষেত্রেও সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি প্রোগ্রাম, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার অননুমোদিত ক্যাম্পাস এবং আদালতের নির্দেশে বন্ধকৃত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন লাভের পর অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, সিলেবাস প্রণয়নের মতো বেশকিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন নিতে হয়। তবে অনেক সময় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সের অনুমোদন পাওয়ার আগেই শিক্ষার্থী ভর্তি ও অবৈধভাবে সনদ বিক্রি করে। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতারিত না হন, সেজন্য শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামও পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়