খায়রুল আলম : অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে অনেকগুলো ভুল তথ্য আছে। একটি ভুল তথ্য হচ্ছে, তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার সমন্নুত রাখার জন্য গত দশ বছরে অনেক কাজ করেছে।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপের সময় তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এগুলো যেভাবে খর্ব হয়েছে, ক্ষুণœ হয়েছে, তা আর কখনো হয়নি। যেভাবে সমাজের মাধ্যে একটি ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, এটির কোনো পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। চারদলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ক্রসফায়ার শুরু করেছিলো। বর্তমান সরকার দিন বদলের কথা বলে আসলেও ক্রসফায়ার বন্ধ না করে, ক্রসফায়ার, গুম এমন বিস্তৃত করেছে তা বলাবাহুল্য। পুলিশ, র্যাবের হাতে সরকার অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা দিয়েছে। অনেকগুলো মানুষ কী কারণে গুম হলো, খুন হলো তার কোনো জবাবদিহিতা নেই। এরকম জবাবদিহিতাশূন্য শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেননি। শধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটি বলেছেন, সেটিও মিথ্যা। তিনি বলেছেন, আবার ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি নেবেন। কিন্তু বর্তমানে দেশে যতোগুলো উন্নয়ন প্রকল্প আছে, সবগুলো একেকটা বড় আকারের অভূতপূর্ব দুর্নীতির প্রকল্প। প্রত্যেকটি প্রকল্পের ব্যয় সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। সেতু, সড়ক বা বিভিন্ন ধরনের যে নির্মাণ কাজ হচ্ছে, সেগুলো সর্বোচ্চ ব্যয়ের মাধ্যমে দুর্নীতির রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন সরকার। আমার মতে এটি খুবই ভীতিকর। উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশগত যে ক্ষতি, অর্থনীতির ওপর চাপ, সেগুলো মূল্যায়ন ছাড়া এটি আরো জোরদারভাবে অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন শেখ হাসিনা। এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপদজনক। মানবাধিকার ও উন্নয়ন প্রকল্পে যদি পুনর্মূল্যায়ন থাকতো, তারা যদি বলতো আমাদের পূর্বে ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে আমরা এ ধারাটি পরিবর্তন করবো, তাহলে আমরা কিছুটা আশারবাণী পেতাম। গ্রামকে শহর বানানো, নদীকে ঝিল বানানোর কথা, এটি উন্নয়ন সম্পর্কিত খুবই ভ্রান্ত ধারণার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের বড় বড় শহরগুলো এখন বসবাসের অযোগ্য। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দূষিত দশটি শহরের একটি আমাদের ঢাকা শহর। শহর হওয়া মানে যদি এমন হয় ভালোভাবে শ্বাস নেয়া যাবে না, বসবাসের অযোগ্য হবে, যান-জটের মধ্যে সারাদিন পার করতে হবে-তাহলে বাংলাদেশের জন্য কি ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প কোনো গর্বের ব্যাপার নয়। এটি আমাদের শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলো বাতিল করার কথা থাকা উচিত ছিলো। তাহলে আমরা বুঝতাম সরকার দেশ নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :