হাবিবুর রহমান : জাতীয় নির্বাচনে মাননসই স্লোগান ও দেয়াল-লিখন কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে এবং ভোটারদের মনোযোগ আর্কষণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যুতসই স্লোগান ও দেয়ালে চিকা মারতে তৎপর থাকে। তবে একাদশ নির্বাচন একেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়লেও তেমন কোনো সুন্দর স্লোগান বা দেয়াল লিখন চোখে পড়ছে না।
যাহোক, নির্বাচনী স্লোগান যে কতো নান্দনিক ও চমৎকার হতে পারে তার দু’একটি উদাহরণ দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। সম্ভবত সত্তর বা আশির ভারতের জাতীয় নির্বাচনে এ স্লোগানটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। ‘দিল্লি থেকে এলো গাই, সঙ্গে বাছুর সিপিআই’। সম্ভবত কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিআইয়ের জোট বাধাকে কটাক্ষ করতেই স্লোগানটি ব্যবহৃত হয়েছিলো। অন্যদিকে ১৯৯১ সাল ভারতের সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হয়, ‘গোলি গোলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়’। বোফর্স অস্ত্র কেলেংকারিতে রাজীব গান্ধীর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিরোধী পক্ষ স্লোগানটি ব্যবহার করেছিলো। অপরদিকে ২০০৯ সালের ভারতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএম-এর রবীন চট্টোপাধ্যায়। দক্ষ সংসদ সদস্য হিসেবে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুনাম ছিলো। কবীর সুমনকে উদ্দেশ্য করে সিপিএম কর্মীরা স্লোগান বানিয়েছিলেন, ‘গানের ছেলে গানই গাক, কাজের ছেলে দিল্লি যাক’Ñ কী কাব্যিক, ছন্দময় ও মানানসই স্লোগান। একবার শুনলে সারাজীবন মনে থাকে। এসব স্লোগান যারা তৈরি করেছিলেন তাদের রুচি, সৃজনশীলতা ও প্রজ্ঞার তারিফ করতেই হয়।
পূর্বের নির্বাচনগুলোতে একটি স্লোগান প্রায়ই শোনা যেতো, ‘অমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র’। এবারে স্লোগানটি আর তেমন শোনা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীরা যেসব আমলনামা পেশ করেছেন তা দেখে কর্মীরা বুঝতে পেরে গেছেন, অমক ভাইদের দেহ পাক-পবিত্র থাকলেও চরিত্র মহাশয় পুরোপুরি নাপাক হয়ে গেছে। নাউজুবিল্লাহ! সুতারাং ওটি এখন নৈব নৈব’চ।
আমাদের নির্বাচনে তেমন কোনো সুন্দর স্লোগান চোখে পড়ে না। বরং কুৎসা ও গালাগালি যেন হয়ে উঠেছে এখন রাজনৈতিক কালচার। এর জন্য দায়ী কি রাজনীতিকদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রুচিবোধের অভাব? নাকি সার্বিক সংস্কৃতির পতন ও জাতীয় সৃষ্টিশীলতার দৈন্য?
লেখক : চাকরিজীবী
আপনার মতামত লিখুন :