শিরোনাম
◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৩ সকাল
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রশ্ন করার যোগ্যতা 

চিররঞ্জন সরকার : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এক সংবাদকর্মী ড. কামাল হোসেনকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি জবাব দিতে চাননি। ওই সাংবাদিক প্রশ্নটি একবার নয় কয়েকবার করেন। আর এতেই ড. কামাল মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। তিনি ওই সংবাদকর্মীকে ধমক-ধামক দেন। হুমকিও দেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরের দিন ড. কামাল ক্ষমা চান। একটি মাত্র প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না চাওয়া নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়। আসলে প্রশ্ন করা বা প্রশ্ন করতে পারাটা একটা বিরাট যোগ্যতার ব্যাপার। এ প্রসঙ্গে নিউজিল্যা- ও চিনের দুটি সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।

নিউজিল্যান্ডে হাই স্কুলের ছাত্রদের জুলিয়াস সিজারের উদ্ধৃতি ‘In war, events of importance are the result of trivial causes’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি রচনা লিখতে দেয়া হয়েছিলো। বহু ছাত্র দাবি করলো, তারা ‘ট্রিভিয়াল’ শব্দটির অর্থ জানে না। প্রায় আড়াই হাজার মানুষ একটি অনলাইন পিটিশনে সাক্ষর করেছেন, প্রশ্নে এমন ‘অপরিচিত’ শব্দ ব্যবহার করবার প্রতিবাদে। পরীক্ষকরা বললেন, ত্রয়োদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জ্ঞাত শব্দভা-ারের মধ্যে শব্দটি থাকবে বলেই তারা অনুমান করেছিলেন। যদি ছাত্রেরা উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা বা সমর্থন করবার জন্য নিজেদের ভাবনাচিন্তা প্রয়োগ করে কিছু লিখে থাকে, তাদের যুক্তি ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই নম্বর দেয়া হবে, ‘ট্রিভিয়াল’ শব্দটির অর্থ ঠিকঠাক বুঝেছে কিনা, তার ওপরে মূল্যায়ন নির্ভর করবে না। আবার সপ্তাহ চারেক আগে চিনেও একটি গণিত পরীক্ষায় প্রশ্ন নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদত্ত প্রশ্নটি হলো, ‘যদি একটি জাহাজে ২৬টি ভেড়া ও ১০টি ছাগল থাকে, তবে জাহাজের ক্যাপ্টেনের বয়স কতো’? চিনের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রশ্ন এবং কিছু ছাত্রের উত্তর ‘ভাইরাল’ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছেন, প্রশ্নটিতে কোনো ভুল নেই, ওইটি করবার উদ্দেশ্য ছিলো ছাত্রদের ‘বিচার-চেতনা’র মূল্যায়ন। তা যে একেবারেই হয়নি, তা নয়। এক ছাত্র লিখেছে, ‘ক্যাপ্টেনের বয়স ন্যূনতম ১৮, কারণ জাহাজ চালাবার জন্য তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হতেই হবে’। অন্য এক জন লিখেছে, ‘ক্যাপ্টেনের বয়স ৩৬, কারণ জন্তুদের সংখ্যা (২৬+১০) তিনি নিজের বয়সের সমান করতে চেয়েছেন’। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গের অভাব হয়নি। কেউ লিখেছে, ‘যদি একটি বিদ্যালয়ে ২৬ জন শিক্ষক থাকে, যাদের মধ্যে ১০ জন কোনও ভাবনাচিন্তা না করেন, তা হলে প্রিন্সিপালের বয়স কতো’? কর্তৃপক্ষ বলেছেন, প্রশ্নটির উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনভাবে চিন্তা করবার অভ্যাস উস্কে দেয়া। চিনে গণিত (ও অন্যান্য বিষয়েরও) শিক্ষা মূলত দেয়া হয় মুখস্ত ও পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে। বহু সমালোচক বলেন, এটা নিজস্ব চিন্তার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। ছাত্রদের ‘সীমানা অতিক্রম করে’ ভাববার ক্ষমতা অর্থাৎ ‘আউট অব দ্য বক্স’ চিন্তাকে প্রণোদিত করবার জন্যই এই প্রশ্ন।

আমাদের মুখস্ত বিদ্যার দেশে, যেখানে কেবল যা সকলেই বলে, তাই আবার বলবার প্রতি জোর দেয়া হয়ে থাকে, নতুন চিন্তা নতুন ব্যাখ্যার প্রতি সার্বিক অনীহা লক্ষ করা যায়, সেখানে যদি পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্ন আসে, যার উত্তর দিতে হলে অমুক পৃষ্ঠা হতে তমুক পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুখস্ত করবার কোনো প্রয়োজন নেই, পরীক্ষাকেন্দ্রে বসে নিজের মাথাটি খাটিয়ে কল্পনা ও যুক্তিবিচার প্রয়োগ করবার প্রয়োজন, তাহলে হয়তো ছাত্রছাত্রীদের মস্তিষ্ক অধিক বিকশিত হতো। গণিতের আপাত উদ্ভট প্রশ্নেরও জবাব তো অনেকে প্রস্তুত করেছে। অর্থাৎ, বাধ্য হলে লোকে মস্তিষ্কের আলস্য কাটিয়ে, তাকে বহু দূর চালাতে পারে, উদ্ভটতার মধ্যে কোনও যুক্তিক্রম লুকিয়ে রয়েছে ভেবে আকাশ-পাতাল হাতড়াতে পারে। আর, তাই কি শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়? চিনের গণিতের প্রশ্নটি যতোই উদ্ভট হোক, নিউজজিল্যান্ডের প্রশ্নটিতে অপরিচিত শব্দ থাকুক, ‘যেমন করে হোক এর সমাধান করবো’ ভেবে শিক্ষার্থীরা যে নিজস্ব যুক্তি দেবার চেষ্টা করেছে বা অপরিচিত শব্দটির অর্থ অবশিষ্ট বাক্যটির প্রেক্ষিতে ভেবে বের করতে চেয়েছে, তা কি চমৎকার মগজব্যায়াম নয়? প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি, যদি এই প্রকারের প্রশ্নের অন্তত একটি বিভাগ থাকে প্রতিটি বিষয়ে, তাহলে শিক্ষার্থীরা মুখস্তের ভার থেকে কিছু পরিমাণে রক্ষা পায়, আর পরীক্ষার ভীতিপ্রদ নখদন্তের মধ্যে খানিক কৌতুক ও উত্তেজনা আবিষ্কার করতে পারে। স্থিতিপ্রীতি যাদের রয়েছে, তারা মহা শোরগোল করবে, তারা নিরাপদ ও নিবিড় অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই জগৎ জয় করতে চায়, কিন্তু কিছু নবীন ও কাঁচা এই দ্বন্দ্বযুদ্ধে উৎসাহী হয়ে উঠবে, শিক্ষাপদ্ধতিকে এই দেশে যেমন নিংড়ে নীরসতম করে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছি, তাতে একটি সতেজ নতুন বাতাস উপস্থিত হবে। কাহিনির তোতা আকাশে উড্ডীন হবে, জন্তুবাহী নৌকাটির ক্যাপ্টেনের বয়সজিজ্ঞাসার রহস্যটি ‘ট্রিভিয়াল’ বা তুচ্ছ মনে হবে না!

এই ফাঁকে, ড. কামাল হোসেনকে প্রশ্নকারী সংবাদকর্মীটিকে এবং অনাকাক্সিক্ষত আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনকে ধন্যবাদ জানাই। লেখক : কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়