শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৪৫ রাত
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২৯ মার্চের বৈঠকে রেজ্যুলিউশন নেয়া হয় ‘স্টপ দিস জেনোসাইড’

প্রিয়াংকা আচার্য্য : ১৯৭১ সালে গৌরি ভট্টাচার্য আগরতলার জিবি হাসপাতালে সেবিকার কাজ করতেন। ত্রিপুরায় আসা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন অকাতরে। আগরতলায় তখন ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ড. এম এ মবিনের করা বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালেও বিভিন্ন সময়ে সময়ে কাজ করেছেন। তার স্বামী ত্রিপুরার প্রভাবশালী সাংবাদিক অনীল ভট্টাচার্য। বাংলাদেশ থেকে আসা সকল নেতাকর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকরা তার বাড়িতে নিয়মিত যেতেন। গৌরি ভট্টাচার্য আন্তরিকভাবে তাদের আপ্যায়ণ করতেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য অনীল ভট্টাচার্যকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আগরতলায় তার বাড়িতে বসেই শোনালেন একাত্তরের কথা।

মার্চের শেষ সপ্তাহে সুরজিৎ ঘোষাল ও দীপক ভট্টাচার্য নামে দুই তরুণ সাংবাদিক নিজেদের পরিচয় গোপন করে বেনাপোল বর্ডার পাড় হয়ে বাংলাদেশে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের অত্যাচারের তথ্য সংগ্রহ করতে। ওরা ঘুরতে ঘুরতে কুমিল্লায় এসে মুনীরুল ইসলাম নামে ওখানকার এক ছাত্র নেতার সাথে আগরতলায় আমাদের বাসায় উঠে। অনীলের সঙ্গে আলোচনা হলো। তথ্য পেয়ে ওরা জানালো পরদিনই চলে যাবে। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় আমি তাদের কয়েকদিন থেকে যেতে বললেও তারা তা শুনলো না। আলুভর্তার সাথে ঘি আর ডিমের ঝোল খাইয়ে ওদের বিদায় দিলাম। ওদের জামাগুলো কয়েকদিনের ছোটাছুটিতে ময়লা হয়ে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে আমায় বললো, বৌদি আমাদের কাপড়গুলো ধুয়ে রাখবেন। পরেরবার এসে নিয়ে যাবো।
ওরা আর আসেনি। কলকাতা যাওয়ার পথে কুমিল্লার এক জায়গায় পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে ধরা পরার পর তাদের হত্যা করা হয়েছিল। সম্ভবত ওরাই ছিল প্রথম ভারতীয় যাদের পাকিস্তানি মিলিটারি হত্যা করে।

২৯ মার্চ পূর্ববাংলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের নিয়ে একটা বড় মিটিং হয়ে আমাদের বাড়িতে। আমার ছোট দুই মেয়েকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। দুই বাংলার প্রায় ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি জড়ো হয়েছিলেন। মাটিতে বিছানার চাদর পেতে তাদের বসার ব্যবস্থা করেছিলাম। মিটিংয়ে রেজ্যুলেশন নেয়া হয়- স্টপ দিস জেনোসাইড। ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা পূর্ববাংলার সাধারণ নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালানো গণহত্যা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার জেষ্ঠ সাংবাদিক সুভাষ চক্রবর্তী রেজ্যুলিউশনটির ড্রাফট করেছিলেন। জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন মহাসচিব উথান্ট এবং সকল সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে রেজ্যুলিউশনটির কপি পাঠানো হয়।

আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাজাহান সিরাজ এই তিন ছাত্র নেতা নিয়মিত আসতেন আমাদের বাড়িতে। দফায় দফায় মিটিং হতো। আমার কাজ ছিল রান্না করে তাদের খাওয়ানো। প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ কাপ চা ডেকচিতে রান্না করতাম। ভাত-ডাল-ডিমের ঝোলের হাড়ি উনুনে লেগেই থাকতো। সবাই হাতে করেই খেতো বসার জায়গা দিতে পারতাম না। টাকার জন্য অন্যান্য খাবারের আয়োজন করাও ছিল দুঃসাধ্য। একদিন সবজি দিয়ে তরকারি রান্না করায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী কী খুশিটাই না হয়েছিলেন।

হাসপাতালে আমরা বহু আহত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের সেবা করেছি। আমাদের সার্জেন্ট ছিলেন ড. রথীন দত্ত। তিনি নিরলসভাবে সার্জিক্যাল অপারেশন করে গেছেন একের পর এক। ড. এইচ এস রায় চৌধুরীও রোগীদের পাশে থেকেছেন পুরোটা সময়। হাসপাতালে আহতদের পাশাপাশি পাকিস্তানিদের নির্যাতনের ফলে সন্তানসম্ভবা অনেক নারী আসতো। আগরতলায় তখন একটা মেটারন্যাল ক্লিনিক ছিল। সেখানে ঐ মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হতো চিকিৎসার জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালেও গিয়েছি অনেকবার।

আমার স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত ফ্রন্টে যেতেন খবর আনতে। তার সঙ্গে খালেদ মোশারফের খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। একদিন খালেদ মোশারফ আসেন আমাদের বাড়িতে। ঘরে তেমন কিছু না থাকায় তাকে শুধু রুটি-তরকারী খেতে দিয়েছিলাম। তিনি যুদ্ধের ঘটনাগুলো আমার স্বামীকে লিখে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনিও কথাবর্তা বলে খেয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় অনেক বড় বড় আর্মি অফিসার প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়ি। আমি যুদ্ধ ফ্রন্টে গিয়ে দেখিনি, দেখেছি তাদের কথা শুনে। তাদের অভিজ্ঞতার বিবরণের মধ্য দিয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়