আমিরুল ইসলাম : নির্বাচন একটি বেসামরিক বিষয়। নির্বাচনী কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা থাকা উচিত না বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক জুনায়েদ আহমেদ হালিম।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে যারা অনিবার্য মনে করেন তারা প্রকৃত গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষ না। তারপরও আমাদের প্রকৃত বাস্তবতায় সেনাবাহিনীকে রাখা হলে এক ধরনের জনআস্থা তৈরি হয়। সেই জনআস্থা তৈরি করার জন্য সেনাবহিনীকে ২৪ ডিসেম্বর নামানো হচ্ছে এবং নির্বাচনের পরেও আরও দুদিন সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা হবে। সেনাবাহিনী কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা না। সরকার চলে প্রচলিত আইনের ভিত্তিতে। নির্বাচনী আচরণবিধি আছে। ফৌজদারী আচরণবিধি আছে বাংলাদেশে। কেউ যদি এ আচরণ লঙ্ঘন করে বেআইনি কাজকর্ম করে সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট তার যে ক্ষমতা আছে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, তিনি যদি মনে করে সেনাবাহিনীর সহায়তা লাগবে তাহলে কোনো একটি কেন্দ্রের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারবেন। সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। নির্বাচনের ছয় দিন আগে থেকে নির্বাচনের দু’দিন পর পর্যন্ত । এটাই পর্যাপ্ত। একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কেনো সামরিক ছত্রছায়া লাগবে ?
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর তৃতীয়বারের মতো কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনো যে দিনগুলো সামনে রয়েছে সেদিন গুলো একই সাথে শঙ্কার এবং আশার। প্রথমটি হয়েছিলো ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরিচালিত রাজনৈতিক সরকার বা প্রথম বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একটু ভিন্ন রকম ছিলো কারণ একটি বিশাল পক্ষ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা নির্বাচনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলো। এটাতে তারা ব্যর্থ হয়েছিলো। নির্বাচনটি নানা বিষয় উপেক্ষা করেও অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলো এবং আওয়ামী লীগ একশ চুয়ান্নটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলো এবং সাংবিধানিক নিয়ম এবং ধারাবাহিকতায় সে নির্বাচনটি আইনগতভাবে সম্পূর্ণ বৈধ ছিলো। কিন্তু সকল দলের অংগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনটি নিয়ে নানারকম প্রশ্নের তৈরি হয়েছিলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনেই হচ্ছে। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া ও প্রত্যাহারের সময় ব্যাপক উৎসাহউদ্দীপনা ছিলো । নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর জন উৎসাহে কিছুটা ভাটা পরে গেছে। বিএনপি এখন বিভিন্ন উছিলায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নাম করে এখন তারা মিথ্যাচার চালাচ্ছে। নির্বাচন থেকে তারা ইচ্ছা করে দূরে সরে যেতে চাইছে। তারা যে হামলা, মামলা ও হুমকি দামকির কথা বলছে তা কেবল নির্বাচনী ভাষ্য। কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচনী মাঠ বাঁকা থাকলেও মাঠে টিকে থাকতে হয়। তা থেকে দূরে সরে যাওয়া ভালো রাজনৈতিক চরিত্র নয়। বিএনপির নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারটি এখন নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে একটি শঙ্কার বিষয় বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।
আপনার মতামত লিখুন :