এস এম নূর মোহাম্মদ : তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়াই হতে যাচ্ছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মূলত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণেই আটকে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আর আইনি জটিলতার কারণেই এবারের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। যদিও এর আগে আপিল বিচারাধীন রেখে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নির্বাচন করে সংসদ সদস্য এবং পরে মন্ত্রী হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অসম্ভব। তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নূন্যতম দুই বছর কারাদণ্ড হলে এবং মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে তিনি নির্বাচনে যোগ্য হবেন না। এমনকি খালাস পেলেও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, দুর্নীতির দুটি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ, হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের দণ্ড বাতিল করেননি, সাজা বাড়িয়েছেন। অপর মামলায় হাইকোর্টে আপিল বিচারাধীন। দণ্ড বাতিল বা স্থগিত না হলে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে অংশ নিতে তিন আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়ার পক্ষে। তবে মনোনয়ন বাতিল হলে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যৈষ্ঠ বিচারপতি রুলসহ মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি তা নাকচ করেন।
এরপর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করে দেন। তবে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে ওই একক বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ বিষয়ে আজ সোমবার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। আজ একক বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হলে তা প্রধান বিচারপতির কাছে ফেরত পাঠানো হবে। এরপর শুনানির জন্য আবারও নতুন বেঞ্চ গঠন করে দিবেন প্রধান বিচারপতি। নতুন বেঞ্চ খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করলে আপিল বিভাগে যেতে পারবেন তিনি। তবে ১৯ ডিসেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ২ দিন বসলেও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বসবে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি।
এর আগে বিএনপির ৫ নেতার আবেদনে হাইকোর্ট বলেছেন, আপিল বিচারাধীন রেখে নির্বাচন করা যাবে না। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। তবে বিএনপির অপর এক নেত্রীর বিষয়ে ভিন্ন আদেশ দেন হাইকোর্টের অপর একটি একক বেঞ্চ। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে ওই একক বেঞ্চের আদেশ স্থগিত করা হয়।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা প্রায় সব মামলাতেই একে একে জামিন নিয়েছেন তিনি। তবে এখন কুমিল্লায় দায়ের হওয়া হত্যায় মামলায় জামিন নিতে হবে তাকে। বিষয়টি এখন কুমিল্লার জেলা জজ আদালতে রয়েছে। তবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজা থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জামিনও চাওয়া হয়েছে এই মামলায়। আর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে আপিল বিভাগে।
১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। এরপর ধারাবাহিকভাবে আছেন ওই পদে। এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়সহ কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। তবে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজা হলে ওই দিনই কারাগারে যেতে হয় তাকে। সেই থেকে কারাগারেই রয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :