শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:০০ দুপুর
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দশ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার

শাহীন চৌধুরী: বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহনের পর থেকে বিদ্যুৎ খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ বছরে বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থের সিংহভাগ বিনিয়োগ হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে গত ১০ বছরে তেল ও গ্যাসভিত্তিক ৯৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যার সম্মিলিত সক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এছাড়া কয়লাভিত্তিক ১৯টি প্রকল্পেও বড় অংকের বিনিয়োগ হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াট। যদিও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখনো উৎপাদনে আসেনি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্রমতে, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও আমদানিসহ দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। সে হিসেবে তিন বছর আগেই এ খাত থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। অথচ বর্তমানে মাত্র ৫৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে থাকার পেছনে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতি বিনিয়োগকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে এই ১০ বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে যোগ হয়েছে মাত্র ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার সিংহভাগ হচ্ছে সোলার হোম সিস্টেম। এখান থেকেই যোগ হচ্ছে ২৮৬ মেগাওয়াট। সোলার পার্ক, সোলার মিনি গ্রিড এবং রুফটপ সোলারে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই গত ১০ বছরে। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে মোট বিদ্যুতের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে- যার পরিমাণ ৬৯ হাজার মেগাওয়াট। ২০২২ সালে এ খাত থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে দেশটি।

বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এ সক্ষমতায় গ্যাস, তেল ও কয়লাসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সৌর শক্তি, বায়ু, জল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ বা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। আর ২০১৫ সালের মধ্যেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৫ শতাংশ বা ১০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল। অথচ বর্তমানে মোট বিদ্যুতের মাত্র ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ আসছে এ খাত থেকে।

ভৌগোলিক অবস্থান এবং সীমাবদ্ধতাকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অনগ্রসরতার জন্য দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। যদিও এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার জমি ও ভৌগোলিক অবস্থানকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সূর্য রশ্মি ও বাতাসের যে গতি রয়েছে, তা ব্যবহার করে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি জ্বালানি পাওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জির পরিচালক ড. সাইফুল হক বলেন, জমি কোনো সমস্যাই না। যে পরিমাণ পতিত জমি রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা হলে কৃষির কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করলে বিদ্যুৎ এবং ফসল দুটি একই সঙ্গে পাওয়া সম্ভব। আমাদের সব নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমান ও রেলওয়ে ভবনের ছাদে যে পরিমাণ খালি জায়গা আছে, সেখানে রুফটপ স্থাপন হলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।

২০১৬ সালে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে জাপানের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার (জাইকা) করা বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা খসড়ায় দেখানো হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে মোট ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এর মধ্যে শুধু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে মোট ২ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে ২৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব।

অন্যদিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ‘মুভিং টু এ লো কার্বন অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ফিউচার’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাতের বড় গ্রাহক পশ্চিমা বিশ্ব। এসব গ্রাহক কোনো কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কেনার আর কিছু শর্ত মেনে তৈরি পোশাক ক্রয় করে থাকে, যার একটি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশের সব পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তা মানতে আগ্রহী। সে হিসেবে সব পোশাক কোম্পানির কারখানার ছাদে রুফটপ সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।

সোলার ইরিগেশন পাম্পকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির আরেকটি সম্ভাব্য খাত হিসেবে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পিআরআই। প্রতি বছর কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ২০ লাখ পাম্প ব্যবহার করা হয়, যেগুলো বিদ্যুৎ এবং ডিজেলে চলে। কিন্তু প্রতি জেলা থেকে ১০ হাজার কৃষককে ১০ কিলোওয়াটের সেচ পাম্পের আওতায় আনা হলে ৬৪টি জেলায় ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক জোন এবং চা বাগানের বিশেষ অংশে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়