শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪২ রাত
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. কামালের ভীমরতি, নাকি ভীমক্ষতি?

অসীম সাহা : গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি-সৌধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন জামাতের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে যমুনা টিভির এক নারী সাংবাদিকের প্রশের উত্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে আক্রমণ করেন এই বলে যে, “বেহুদা কথা বলো। কার কাছ থেকে টাকা পেয়েছো? শহীদ মিনারে এসে শহীদদের অশ্রদ্ধা করো। চুপ করো, চুপ করো। খামোশ।” তিনি সাংবাদিকের পরিচয় জেনে নিয়ে তাকে দেখে নেবারও হুশিয়ারী দেন। ভিডিওতে তাঁর এই আচরণ দেখে আমি স্তম্ভিত, বিস্মিত, হতবাক, বিমূঢ় এবং লা-জবাব। এতোদিন ধরে আমরা বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী অশীতিপর আবদুল মুহিতের আচরণে বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ ছিলাম। তিনি কথায় কথায় ‘রাবিশ’; শব্দটি ছুড়ে দিতেন সাংবাদিকসহ সকলের উদ্দেশ্যে। এখন দেখছি, মুহিত সাবকে পেছনে ফেলে ড. কামাল সকল সভ্যতা-ভব্যতার মাত্রা অতিক্রম করে একজন সাংবাদিককে হুমকি দিলেন! এই বয়সে তিনি এতোটা ক্ষুব্ধ হতে পারেন, ভেবে তাঁর রাগত এবং গোলগাল মুখটা মনে পড়ছে! তা হলে আশি পেরুলেই কি মস্তিষ্কে কিছু গ-গোল দেখা দেয়? কিন্তু প্রবাদে যে আছে, ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি’। এর সহজ অর্থ দাঁড়ায়, বুড়ো বয়সে যৌনমিলনে যেখানে অক্ষম হবার কথা, সেখানে তার রতির (যৌনতার) ক্ষমতা মহাভারতের পঞ্চপা-বদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী যে জ্যেষ্ঠ ভাই ভীম, তার মতো হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে তা হবার কথা নয়। কিন্তু প্রতীকী অর্থে কামাল হোসেনদের জন্যে এটা প্রযোজ্য হবে ভেবেই বোধহয় প্রবাদ রচয়িতারা এই বুড়ো বয়সে এমন হবে ভেবে ‘ভীমরতি’র মতো একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রবাদ রচনা করেছিলেন। তাঁরা জানতেন ভবিষ্যতে কামাল হোসেনদের মতো বুড়োরা এ-ধরনের সাহস করবেন। নির্বাচনে স্বাধীনতার বিরোধীদের পক্ষ নেবেন এবং সে-প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ভীমের মতো রাগ করে নারী সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দেবেন! কিছুদিন আগে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন টিভি টক-শোতে একজন নারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন বলায় তিনি এখন আইনের আওতায় জেলে। তা হলে ড. কামাল হোসেন বাইরে কেন? তাঁর বিরুদ্ধে কেন সাংবাদিকসমাজ সোচ্চার নয়?

ড. কামাল হোসেনের মতো মিতকথনের মানুষ হঠাৎ করে রেগে গেলেন কেন? তা হলে সাংবাদিক মেয়েটি যে প্রশ্ন করেছিলেন, তা নিশ্চয়ই ঠিক তাঁর মোক্ষম জায়গায় গিয়ে ঘা মেরেছিলো? তিনি তাঁর সম্পৃক্ততার কথা সরাসরি অস্বীকার করলেই তো পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি রাগলেন। কারণ কি এই যে, তাতে মিথ্যে বলা হতো? সেটা বুঝেই যে তিনি আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, এটা কারো না বোঝবার কথা নয়! থলের বেড়াল বেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। ড. কামাল যতোই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুন, তাতে যে কোনো লাভ হবে না, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই তাঁর এতো রাগ সাংবাদিকদের ওপর? তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, ঐ টিভি চ্যানেলকে দেখে নেবেন বলে। কী দেখে নেবেন? ক্ষমতায় গেলে ঐ চ্যানেলকে বন্ধ করে দেবেন? তা হলে যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এতো বড় বড় বুলি প্রতিদিন কপচে যাচ্ছেন, সেটার কী হবে? আপনার এই আচরণ কি দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বার্তা বহন করে? বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী এবং গ্রেনেড-হামলা করে জাতির পিতার কন্যাকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন কি এমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে?

এর ফলে আপনার ‘ভীমরতি’র নমুনা লোকে দেখলো এবং বুঝতে পারলো ভীমরতির ক্ষমতা নেই বলে আপনি ভীমরতি নয়, ভীমক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে ফেললেন! এখনো ক্ষমতায় আসেননি কিন্তু এমন ভাব করলেন, যেন আপনারা নিশ্চিত ক্ষমতায় এসে গেছেন। তাই সাংবাদিককে দেখে নেবার হুমকি দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। কিছুদিন আগেই এক টক-শোপতে আপনার পাশে দাঁড়ানো নামে জাসদ, কামে বিএনপির হুকুমবরদার আসম আবদুর রব সাংবাদিক নজরুল কবীরকে যে ভয়ংকর ভাষায় হুমকি দিয়েছিলেন, আপনি তারচেয়ে একটুও কম যাননি। আসলে অস্তগামী সূর্য অস্ত যাবার আগে একটু বেশি ঝলক দেখিয়ে যায়। আপনিও কি সেই কাজটিই করলেন ড. কামাল হোসেন? তা হলে এটা বলতেই হবে, একটু অপেক্ষা করুন। সাংবাদিক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিককে অপমান ও আক্রমণ করে অতীতে কেউ রক্ষা পায়নি, আপনিও পাবেন না। ভীমরতি দেখাতে গিয়ে যে ভীমক্ষতি হয়ে গেলো, আপনার মতো জ্ঞানীও তা বুঝতে পারলো না?

লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়