সমীরণ রায় : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে ১৪ ডিসেম্বর পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানদের নিধন করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে-তা নিশ্চিত করা। তাই বেদনায় আচ্ছন্ন মন। শোকে মুহ্যমান হৃদয়। এমনই এক বেদনাবিধুর পরিবেশে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করলো জাতি।
বুদ্ধিজীবী দিবসে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। চিহ্নিত ঘাতকদের বিচার হওয়ায় এই স্বস্তি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের বুদ্ধিজীবী দিবস ছিল ভিন্নমাত্রার। ফলে শহীদ সন্তানরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিলেন ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য। তাদের রক্তের প্রতি ঋণ আছে। তাই তরুণরা ঋণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকবে এবং কথা বলবে শহীদদের রক্তের সঙ্গী হয়ে। আগামী নির্বাচনে তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট দেবে। ‘নতুন ভোটার, তরুণ ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’-এই মূলমন্ত্রে তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ হতে অনুরোধ জানিয়ে শহীদ সন্তানরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের হাতে দেশের পতাকা দেখতে চাই না। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না।
শুক্রবার মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সশস্ত্র সালাম জানায়, বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ এলাকা। জাতীয় পাতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে হাজারো মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদীতে। পরে শহীদ বেদী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে উঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়।
শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। যদিও এ অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনকে ফাঁসি হয়েছে। কলঙ্ক মোচনের বাংলাদেশ এখন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরও দাবিদার। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকারদের দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটির ২৫ নেতা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে শুক্রবার বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজন করেছিল আলোচনা অনুষ্ঠানের। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিও পালন করতে দেখে গেছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে।
আপনার মতামত লিখুন :