আমিরুল ইসলাম : ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবী হত্যাকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির পরাজয় মেনে না নেওয়ার ও নতুন যুদ্ধ করার প্রতীক বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ যতীন সরকার।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ঘোঘিত হবে এ বিষয়ে সকলে অবগত হয়েছিলো। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ সচেতনতার সাথে বেশি পরিমাণ আনন্দমুখর হয়ে গিয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের যে শক্তি দেশের মধ্যে ছিলো তারা যতো কম সংখ্যকই হোক তারা তাদের পরাজয়টা মেনে নিতে পারেনি। মেনে না নেওয়ার ব্যাপারটাকেই তারা দেখিয়েছে বিজয়ের দুদিন আগে নতুন যুদ্ধের ফ্রন্ট করে দিয়ে। এ কাজটি করে সেই সময়েই তারা স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যুুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। স্বাধীনতার কয়েক মাস পরেই ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন দেয়াল লিখন ছিলো ‘মুসলিম বাংলা জিন্দাবাদ’। এ দেয়াল লিখন সবাই দেখলেও এটা নিয়ে তেমন মাথা আমরা ঘামাইনি। এর মধ্য দিয়ে যারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তারা তাদের দুঃসাহস দেখিয়েছে। পাকিস্তানকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন যারা দেখেছে তারা আত্মপ্রত্যয়ী ও উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছে।
সে আত্মপ্রত্যয়ে উদ্বদ্ধ হওয়ার জন্যই ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিলো। এ বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নেইনি। বিবেচনায় না নেওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে তিন বছর যেতে না যেতেই তাদের হাতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত হতে হয়। এর পরে তারা আরো কান্ড করলো। বাংলাদেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো বাহাত্তরের সংবিধানের মধ্যে। সংবিধানকে কাঁটাকাটি করে এমন অবস্থায় ফেলে দেওয়া হলো যে, পাকিস্তানেরই পুনরায় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে বলা যেতে পারে। এই অবস্থাটির সৃষ্টি করার জন্যই ১৪ ডিসেম্বর থেকে স্বাধীনতাবিরোধীরা নতুন যুদ্ধে যোগদান করেছিলো।
অনেকেই মনে করেন বাঙ্গালি জাতিকে মেধাশূণ্য করার জন্য এ হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিলো। হ্যা, এটা পিছনে এবিষয়টি ছিলো বুদ্ধিজীবী হত্যার একটি প্রধান কারণ। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা হয়েছিলো সে স্বপ্ন একেবারেই বাস্তবায়িত হয়নি এমনটা নয়। উন্নয়ন অনেক হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ। যেখানে কোনো অবস্থাতেই ধনী আরো ধনী, গরিব আরো গরিব হবে না। সেটি কোনো মতেই সাধিত হয়নি। এদিক দিয়ে বলা যায় সোনার বাংলার স্বপ্ন সফল হয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতা যথার্থভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে সফলতা এবং বিফলতা দুটোই আছে। ব্যর্থতাগুলো দূর করে সাফল্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার ব্যাপারে এখন আমাদের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা খুব বেশি ধারণ করতে পারিনি। তরুণরা যতোটুকু ধারণ করতে পেরেছেন সেটাকে আরো বাড়াতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বুদ্ধিজীবীদের চেতনাকে ভালোভাবে ধারণ করতে হবে বলে মনে করেন এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ।
আপনার মতামত লিখুন :