শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৫১ রাত
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অনিশ্চিয়তার আবর্তে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন

ড. তারেক শামসুর রেহমান, নিউইয়র্ক থেকে: গত ৮ ডিসেম্বর সার্ক ৩৩ বছর পার করেছে। ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা সংস্থা সার্কের জন্ম হয়েছিলো। কিন্তু সার্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের একটি অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে এরই মধ্যে। গত ৯ ডিসেম্বর ইসলামাবদে সার্কের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংগঠনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠক থেকে ভারত বেরিয়ে যাওয়ায় আগামী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা যাবে কিনা, তাতে করে আবারো অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

সম্মেলনে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একজন মন্ত্রী উপস্থিত থাকায়, উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের ঊর্ধতন কর্মকর্তা শুভম সিংহ অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যান। ভারত কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে। ফলে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের (যা পাকিস্তানের একটি প্রদেশ) ‘একজন মন্ত্রী’ উপস্থিত থাকায়, ভারত উক্ত সম্মেলন বয়কট করে। এর আগে ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে ১৯তম সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরিতে একটি সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামরা (২০১৬) পাকিস্তানি জঙ্গিরা জড়িত রয়েছে এই অভিযোগ তুলে ভারত ইসলামাবাদ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করেছিলো।

শুধু ভারত কেন, ভূটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানও সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করেছিলো। ফলে আর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর (২০১৮) সার্কের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংগঠনের শীর্ষ সম্মেলন যখন ভারত বয়কট করলো, আগামী সার্ক সম্মেলনের উপর তা এক ‘কালো ছায়া’ রেখে গেলো।

উরির সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। চলতি বছর জাতিসংঘে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো, তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পাকিস্তান বিতর্কিত হিজবুল মুজাহিদির কমা-ার বুরহান ওয়ারির ছবি দিয়ে ডাক টিকেটে প্রকাশ করলে, তা দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটায়। ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনা অভিযানে বুরহান নিহত হয়েছিলো।

ইমরান খান পাকিস্তনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমনকি ইমরান খান কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করলে, ভারত এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। পাকিস্তান সার্কের আয়োজক। পাকিস্তানকেই সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আয়োজনে কোনো সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারত যোগ দেবে বলে মনে হয় না। কোনো কোনো মহল থেকে সার্কের শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের পরিবর্তে অন্য কোনো সার্কভুক্ত দেশে সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও পাকিস্তানের সম্মতি এতে পাওয়া যায়নি। ফলে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিলো, তা রয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে একটি বিষয় লক্ষ করা য়ায়। আর তা হচ্ছে সার্কের ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি। ভারত এখন সার্ককে গুরুত্ব না দিয়ে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে উপআঞ্চলিক সহযোগিতা ও ভারতমহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১৫ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ, ভারত (সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলো), ভুটান, নেপালকে নিয়ে বিবিআই নামে একটি উপআইএন নামে একটি উপ-আঞ্চলিক সংস্থা গঠন করা হয়। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোর উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা গুরুত্ব পেয়েছে কম।

এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আলোকে এরই মধ্যে ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি এভং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রেন যোগাযোগের উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত। রামগড়-সাবরুম সেতু নির্মাণ করছে ভারত। ফলে আগরতলার পণ্য পরিবহনে এখন এই সেতু ব্যবহার করে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করা যাবে। ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর যাতে ভারত ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যাপারে একটি চুক্তি হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে যে শুল্ক দেয়ার কথা, তাতে রযেছে ভারতের আপত্তি। ভারত তা দিচ্ছে না। ফলে একটা প্রশ্ন থাকছেই থাকতেই এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বার্থ কী? এখানে ভারতের স্বার্থ বেশি। ভারত চায় না এ অঞ্চলে, বিশেষ করে ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে অন্য কোনো বৃহৎ শক্তি কতৃত্ব করুক।

২০১৫ সালের মার্চ মাসে ভারতের ভুবনেশ্বর এর একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। নরেন্দ্র মোদি তখন সবেমাত্র ক্ষমতায় এসেছেন। সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা এটা স্পষ্ট করেছিলেন যে, এই অঞ্চলের দেখ-ভালের দায়িত্ব ভারতের। ভারত চায় না অন্যকোনো দেশ এ অঞ্চলের ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেয়া যাক। ভারত এখন সার্কের বিকল্প হিসেবে বিমসটেককে প্রমোট করছে। ফলে সার্ক ধীরে ধীরে অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তবে এটাও ঠিক গত ৩৩ বছরে সার্কের উন্নয়ন যতোটুকু হওয়া উচিত ছিলো, তা হয়নি। সার্ক এশিয়ান মডেলে গড়ে উঠতে পারেনি। এর জন্য অবশ্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ প্রধানত দায়ী। পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের সমর্থন ও সহযোগিতা করছে- এমন অভিযোগ ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি সার্কভুক্ত দেশের। ফলে সার্কের বিকাশের সম্ভাবনা ক্ষীণ। সার্ক এখন একটি কাগুজে সংগঠনে পরিণত হবে মাত্র।

লেখক : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়