শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৮:১৫ সকাল
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৮:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে, এটা সুষ্ঠু ভোটের আলামত নয়

যুগান্তর : জাতীয় ঐকফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, স্বাধীনতার লক্ষ্যই সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন। কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আলামত নয়। আর সুষ্ঠু ভোট না হলে জনগণের মালিকানা থাকে না। জনগণের মালিকানা না থাকলে স্বাধীনতা থাকে না।

তিনি বলেন, আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকব। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৩০ তারিখ সকালে আপনারা ভোট প্রয়োগ করবেন, ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবেন। দুই নম্বরী করতে দেবেন না। আমরা নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। বুধবার বিকাল পৌনে ৫টায় হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতে গেলে তিনি একথা বলেন।

ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের দায়িত্ব হল জনগণের অধিকার রক্ষা এবং সরকারের অসৎ উদ্দেশ্যকে সমর্থন না করা। তার নিজের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ নিয়ে ড. কামাল বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। মানহানি মামলা করব।

তিনি বলেন, হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে এসেছি দোয়া নেয়ার জন্য। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হয়েছে। ভোটাররা যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেন। জাতীয় পার্টির ১৩২টি আসন উন্মুক্ত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যদি কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যায়। তাহলে জাতীয় পার্টির জন্য রাখা এ উন্মুক্ত আসনগুলো দিয়ে কাভার করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, এসব ফালতু চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইতিবাচকভাবে বলছি আমরা আছি, অবশ্যই থাকব। জনগণ তাদের অধিকার ভোগ করবেন, ভোট দেবেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবেন। তিনি বলেন, যে নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করতে যাচ্ছি সেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত জনগণ ও নেতাকর্মীরা অবশ্যই মাঠে থাকবেন। ড. কামাল ক্লান্ত বোধ করায় রাতের ফ্লাইটেই তিনি টাকায় ফিরে যান।

মাজার প্রাঙ্গণে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা ভিড় জমান। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে স্লোগান দেন- ‘৩০ তারিখ সারা দিন ভোট কেন্দ্র পাহারা দিন’ ও ‘খালেদা জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’। বিমানের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে তাদের বিলম্ব হয়। কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির আ স ম আবদুর রবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা সিলেটে পৌঁছেই হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন।

মাজার গেটে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জনগণের উৎসাহ দেখতে পাচ্ছেন। ঐক্যফ্রন্টের পূর্ণ বিজয় দেখতে পাচ্ছি উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে এসেছি দোয়া চাইতে। কেননা অত্যাচারে দেশটা ছেয়ে গেছে। ড. কামালকে নিয়ে এসেছি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে দোয়া নিতে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম, এবারও আমরা জনগণের ভোটের বিজয় ছিনিয়ে আনব ইনশাআল্লাহ।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আদর-চুমু দেবে- তা ভাবার কোনো কারণ নেই। ভয়ের কোনো কারণ নেই, আপনারা মাঠে থাকুন। জনগণের বিজয় নিশ্চিত।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তার কাছে গণতান্ত্রিক আচরণ আশা করা বোকামি। তারা স্বৈরাচারী সরকারের মতোই আচরণ করছে। জাতীয় পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এ নেতা বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আশির দশকের স্বৈরাচারী সরকার। এ দুই স্বৈরাচার মিলে যে আচরণ করছে, সেটা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়।

জনগণের জন্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি। আজ তিনি কারাগারে। তারপক্ষ থেকে শুধু বিএনপি নয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট সবাই মিলে নেমেছি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো মুক্তিযুদ্ধের মহানায়করা আছেন। বিজয় হবেই আমাদের।

এ সময় সিলেট-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক, বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল গফফার, সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী, ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সৈয়দ তৌফিকুল হাদীসহ দল ও জোটের নেতাকর্মীরা ছিলেন।

সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি জনসভার উদ্দেশে রওনা দেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের পথসভায় ছিলেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে জৈন্তাপুরের বটতলার সমাবেশে অংশ নেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

এদিকে, কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট পৌঁছার আগেই দুপুরে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার প্রাঙ্গণে আনা মাইক ব্যবহারে বাধা দেয় পুলিশ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, অনুমতি ছাড়া মাইক ব্যবহার করা যাবে না। পরে দরগাহ প্রাঙ্গণে মহিলা এবাদতখানা ও বিশ্রামাগারের সামনে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের জন্য রাখা একটি সোফা ও মাইক নিয়ে যায় পুলিশ।

এ সময় ওসি বলেন, ঐক্যফ্রন্টকে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে, দরগাহে নয়। কোনো অনুমতিও চাওয়া হয়নি। কথা হয় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সঙ্গে। তিনি  বলেন- চেয়ার, টেবিল, মাইক নিয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তাজনিত কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা জানতে চেয়েছিল পুলিশ। আমরা বলেছি, আপাতত তার কোনো প্রয়োজন নেই।

রেজিস্ট্রারি মাঠে সভা না করার কারণ বলতে গিয়ে মহানগর বিএনপি নেতা ও সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদি বলেন, সময় স্বল্পতা ও একাধিক কর্মসূচি থাকায় রেজিস্ট্রি মাঠের সভা স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, দরগায় মাজার জিয়ারতের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার জন্য একটি ছোট মঞ্চ ও মাইক বসানো হয়েছিল। পুলিশ সব কিছু নিয়ে গেছে।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সিলেট সফর নিয়ে দফায় দফায় কর্মসূচি বদল করা হয়। গত ২ দিনে কর্মসূচিতে কয়েক দফা পরিবর্তন আনা হয়। কী কারণে এমন হচ্ছে এ ব্যাপারে মুখ খুলতেও রাজি হননি ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত স্থানীয় নেতারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কিছুটা সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে।

বুধবার দুপুর ১টায় সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, মাজার জিয়ারতের পর নেতারা সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে পথসভা করার কথা থাকলেও আকস্মিকভাবে তা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে সিলেট-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী বুধবার বেলা ১১টায় বিএনপির জরুরি বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন তার নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে পথসভা হবে। সেখানে ড. কামাল প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেছেন, কবে কখন, কোথায়, কি হবে তা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। এর ফলে কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি হয়েছে। তিনি বলেন, কৌশলগত কারণে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আগে ২৪ অক্টোবর সিলেটে আসেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। সেদিন সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তখনও সিলেটে সমাবেশ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ঐক্যফ্রন্টকে।

ঐক্যফ্রন্টকে বিজয়ী করতে ধানের শীষে ভোট দিন- আবদুর রব : দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ স ম আবদুর রব বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন জোরদারে ধানের শীষে ভোট দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বিজয়ী করতে হবে। বর্তমানে দেশে আইনের শাসন নেই। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নেই। লুটেরা আর দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ে দেশের মানুষ আজ দিশেহারা। তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে।

আগামী সংসদ নির্বাচন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার। তিনি বলেন, মামলা-হামলা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের অগ্রযাত্রা স্তব্ধ করতে চায় সরকার। নির্বাচন কমিশনকে হাতের পুতুলের মতো ব্যবহার করছে। তিনি আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্র পাহারাদানের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি সভাপতি হাজী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়